স্মৃতিতে প্রশান্ত সরকার

স্মৃতিতে প্রশান্ত সরকার

২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর আমাদের সাহিত্য সংগঠন বেঙ্গলি লিটারারি রিসোর্স সেন্টার (বিএলআরসি) আয়োজিত দ্বিতীয় কানাডীয় লেখক সম্মেলনের শুরুতে সকল অতিথি দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালনের মধ্য দিয়ে কানাডার বাঙালি কমিউনিটির সেই সময় পর্যন্ত প্রয়াত যে সকল লেখকের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন তাঁরা হলেন ড. মীজান রহমান, মোল্লা বাহাউদ্দিন, ড. জহিরুল ইসলাম, মাহফুজুল বারী এবং ড. প্রশান্ত সরকার।

যাদীদ বিহনে যাপিত জীবন

যাদীদ বিহনে যাপিত জীবন

পরিণত বয়সে আমরা মৃত্যুকে মেনে নিই, কিন্তু মৃত্যু থেকে সঞ্জাত যে বেদনা তা মেনে নিতে পারি না। প্রথমে আমরা সবার সামনে কাঁদি, তারপর সারাজীবন নিজের ভিতরে কাঁদি। আমার স্মৃতিশক্তি প্রবল বিধায় সেই শৈশব থেকে আজ পর্যন্ত কত কথা আর দৃশ্য যে নিজের ভিতরে জমা করেছি সে আমি জানি আর আর আমার মনই জানে। তবে সায়ীদ যাদীদকে এতো দ্রুত আমার স্মৃতির মণিকোঠায় সাজাতে হবে তা ভাবিনি।

ইকবাল হাসান : বন্ধু আমার

ইকবাল হাসান : বন্ধু আমার

আমরা আসলে এক কয়েনের দুই দিক। শুধু নামেই নয়, দীর্ঘ জীবনের পদে পদে পরস্পর একে অন্যের জীবনে ওভারলেপ করেছি। ২০১৪ সালে বাংলা একাডেমির প্রথম শুরু করা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার আমরা দু’জন পাই ২০১৫ সালে। বইমেলার লেখক কুঞ্জের আড্ডায় আহমাদ মাযহার হাসির ছলে বলে ফেলেছিলেন – এবার ওয়ালীউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার পেলেন সৈয়দ ইকবাল হাসান। ক’দিনে মেলায় ছড়িয়ে গেছে মাযহারকৃত আমাদের দু’জনের নাম এক করা স্যাণ্ডউইচ।

কবি আসাদ চৌধুরী: উলানিয়া থেকে অশোয়া

কবি আসাদ চৌধুরী: উলানিয়া থেকে অশোয়া

জীবনানন্দ দাশের সেই বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া’র কবি আসাদ চৌধুরী (১৯৪৩—২০২৩) এখন আর গালে হাত দিয়ে রুপালি তবক দেয়া পান নিয়ে সারারাত জেগে থাকছেন না। যে পাখিকে তিনি তাঁর ‘ডানা-অলা বন্ধু’ বলে জানতেন, সেই পাখিরা গত ০৫ অক্টোবর ২০২৩ তাদের ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে টরন্টো শহরের আকাশটাকে বেদনাময় করে তুলেছে। এখানে, এখনো বাতাস ক্ষণে ক্ষণেই ফুঁপিয়ে উঠছে।

কণ্ঠশিল্পী রঙ্গলাল দেব চৌধুরী: একটি ভূমিকা

কণ্ঠশিল্পী রঙ্গলাল দেব চৌধুরী: একটি ভূমিকা

স্বর্গীয় রাসবিহারী দেব চৌধুরী ও স্বর্গীয়া সুবাসিনী দেব চৌধুরীর ঘর আলো করে এক শুভক্ষণে রঙ্গলাল দেব চৌধুরী পৃথিবীর মাটি স্পর্শ করেন। ক্যালেন্ডারের তারিখ মোতাবেক সেই শুভক্ষণটি ১৯৩৬ সালের ৭ জুলাই। জন্মসূত্রে রঙ্গলাল দেব মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার অধিবাসী। তাঁর পিতামহ রাধানাথ দেব চৌধুরী ছিলেন প্রভাবশালী ও প্রতিপত্তির অধিকারী এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। ১৯৪৭ সালের পূর্বে অবিভক্ত বাংলা ও আসাম প্রদেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে খ্যাতি ছিল তাঁর।

বারী ভাইকে আজ খুব বেশি মনে পড়ছে

বারী ভাইকে আজ খুব বেশি মনে পড়ছে

আজ ভাবলে অবাক হই মাহ্ফুজুল বারী আমাদের এই টরন্টো শহরে বসবাস করতেন। এবং আনন্দিত হই তিনি এই শহর নিয়ে গর্ববোধ করতেন। এই শহরের বাঙালি কমিউনিটির গতি প্রকৃতি তাঁর নখদর্পণে ছিল। তিনি ছিলেন আমাদের অভিভাবক, অগ্রনায়ক, সময়ের সাহসী সেনাপতি ও নির্দ্বিধ প্রশ্রয়দাতা বন্ধু। বারী ভাই যুদ্ধ করেছিলেন মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত: বৈরী সময়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, সাম্প্রদায়িক দাবানলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, প্রকৃত মননশীল ও মানবিক মানুষ হয়ে উঠার বাঁধার বিরুদ্ধে যুদ্ধ।

টরন্টোর উদ্যমী বাঙালি অসিত কুমার দত্ত

টরন্টোর উদ্যমী বাঙালি অসিত কুমার দত্ত

অসিত দত্তের জন্ম হয়েছিল নির্ধারিত সময়ের পাঁচ মাস আগেই। তারিখটা ছিল ১৯৩৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। অসিত  মনে করতেন তখন থেকেই যমরাজা তাঁর মুত্যুর বোতামটি টেপার জন্যে প্রস্তুত। কিন্তু চিত্রগুপ্ত নাকি দৌঁড়ে এসে যমকে দেখিয়েছিলেন, অসিতের অনেক কাজ করবার রয়েছে – খাতায় নাকি তেমনটিই লেখা রয়েছে। রহস্যজনকভাবে বেঁচে যাওয়া সেই মাংসপিণ্ড বড়ো হবার সাথে সাথে শুরু করেন দাপট ছড়াতে। পরিবারের ও সমাজের ওই প্রজন্মের সকলের প্রিয় অসিত ক্রমে ক্রমে হয়ে ওঠেন দাপুটে মেঝদা।

মীজান রহমান: দৃপ্ত এক মানবিক বোধের নাম

মীজান রহমান: দৃপ্ত এক মানবিক বোধের নাম

অধ্যাপক ড. মীজান রহমান (১৯৩২-২০১৫) প্রয়াত হয়েছিলেন জানুয়ারি মাসের ৫ তারিখে। তাঁর মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়া মাত্রই টরন্টোর বাঙালি সমাজে গভীর এক হাহাকারের শব্দ শোনা গিয়েছিল। সে শব্দের তীব্রতা পুরো উত্তর আমেরিকা জুড়েই চলেছিল বেশ কিচুদিন। কানাডা-আমেরিকা জুড়ে অনেকগুলো শহরে তাঁকে নিয়ে শোকসভাও হয়েছিল। আমার বর্তমান শহর টরন্টোতেও তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে ৮ ফেব্রুয়ারি বাঙালিরা সমবেত হয়েছিলেন টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কারবরো ক্যাম্পাসে। সেখানে মনস্বী এ বাঙালির জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা ছাড়াও তাঁর জীবনী নিয়ে তৈরি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, তাঁর লেখা বইয়ের প্রদর্শনী, তাঁর রচিত পুস্তক থেকে পাঠ, এবং তাঁর পছন্দের গান ও কবিতা নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।

ড. জহিরুল ইসলাম: মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক

ড. জহিরুল ইসলাম: মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক

২০১৫ সালের ২১ জুন টরন্টোর বাংলাদেশ সেন্টারে ‘মুক্তিযুদ্ধে মেজর হায়দার ও তাঁর বিয়োগান্ত বিদায়’ এবং ‘একাত্তরের গেরিলা’ নিয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। বাংলাদেশ সেন্টারে ড. জহিরুল ইসলামের গ্রন্থদুটির ওপর আয়োজিত সে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট চিত্রকর গোপেশ মালাকার। আলোচকদের অন্যতম ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক গবেষক তাজুল মোহাম্মদ। অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা হিসেবে দেলওয়ার এলাহী এবং সওগাত আলী সাগরের সাথে আমারও থাকা সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু এসব বয়ানের পেছনে আরও কিছু কথা আছে।
কথাটা কষ্টের। সে বছর মে মাস থেকেই শুনছিলাম জহিরভাইয়ের ক্যান্সার ধরা পড়েছে। শুনতে শুনতে পত্রিকায় পড়তে থাকলাম তাঁর অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটার কথা।

শ্রদ্ধাঞ্জলি: মোল্লা বাহাউদ্দিন

শ্রদ্ধাঞ্জলি: মোল্লা বাহাউদ্দিন

২০১৫ সালের ১৭ আগস্ট টরন্টোর স্থানীয় সময় রাত বারোটা পেরিয়ে একটায় বাসাতে ফিরি। একটি নিমন্ত্রনে যাওয়াতে ফিরতে এতো রাত হয়ে গিয়েছিল। শুতে যাবার আগে নৈমিত্তিক কাজ হিসেবে ফেসবুকে ঢুকতেই দেখলাম ইনবক্সে কয়েকটি মেসেজ। একটি মোল্লাভাইয়ের কাছ থেকে। অনেক রাত হয়ে গেছে, মোল্লাভাই ঘুমিয়ে গেছেন, এই ভেবে ওটা খুললাম সবার পরে। খুলতেই শরীর-মন অবশ হয়ে আসতে লাগলো। মোল্লাভাইয়ের ফেসবুক একাউন্ট থেকে মেসেজটি পাঠিয়েছেন তাঁর মেয়ে। লিখেছেন, ‘হাই আঙ্কেল, আমি শ্যামা, আব্বা আর আমাদের মাঝে নেই।’