ননী গোপাল দেবনাথের কানাডা নিয়ে বই

সামিনা চৌধুরী

নাগরিক সুবিধা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, শিক্ষার সুব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবার মান, লিঙ্গসমতা, জননিরাপত্তা, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা প্রভৃতিসহ আরো বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পরিমাপ মানদণ্ডের ভিত্তিতে কানাডা বিশ্বের অন্যতম বাসযোগ্য দেশ। দেশটির শিশুজন্মহার নিম্নগামী হওয়ায় সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে কানাডা অন্যান্য দেশ থেকে প্রতিবছর অভিবাসী গ্রহণ করে থাকে। তাই প্রতিবছর বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বহু মানুষ কানাডায় এসে স্থায়ী বসতি স্থাপন করে। এছাড়াও কানাডা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক বা মানবিক বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আপদকালীন সহায়তা প্রদানসহ দীর্ঘমেয়াদি সহাযতা প্রদান করে সুনাম অর্জন করেছে। ফলে কানাডা সম্পর্কে বাঙালি পাঠকের আগ্রহ অপরিসীম এবং প্রতিনিয়তই এই আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাঠকের এই আগ্রহকে সম্মান জানিয়ে কানাডা প্রবাসী লেখক ননীগোপাল দেবনাথ লিখেছেন ‘বৈচিত্র্যময় কানাডা: প্রাগৈতিহাসিক থেকে বর্তমান’ নামে নতুন একটি গ্রন্থ। গ্রন্থটিতে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত কানাডার ভৌগোলিক কাঠামো, ঐতিহাসিক  ধারাবাহিকতা, সামাজিক পরিবর্তন, প্রযুক্তিগত উন্নয়নসহ আরো বেশ কিছু প্রসঙ্গ নিয়ে লেখা হয়েছে।

কানাডা এক রহস্যময় বরফের রাজ্য। এখানকার আদি বাসিন্দারা কবে প্রথম কানাডায় এসেছিল, তারা কারা, সেসব মানুষেরা  কীভাবে সুদীর্ঘ শীতে টিকে থাকতো, কী খেতো আর স্বল্পকালীন গ্রীষ্মে কী ফসল ফলাতো –  এসব প্রশ্ন অনেক পাঠকই করে এসেছে স্বাভাবিকভাবেই। ১৪৯২ সালে কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের আরো পরে বিশ্বের মানুষ কানাডার সন্ধান পায়। সে সময়ে স্পেন, ফ্রান্স এবং ব্রিটেন বিশ্বের বড় ক্ষমতাশীল দেশ ছিল এবং কীভাবে এই বড় শক্তিশালী দেশগুলো কানাডাতে কলোনি তৈরী করেছিল, কানাডার প্রথম মানচিত্র কে তৈরী করেছিলেন, কানাডীয় আদিবাসীদের সাথে কোন শর্তে এইসব কলোনি তৈরী করা সম্ভব হয়েছিল,  কীভাবে কনফেডারেশনের মাধ্যমে কানাডা একটি বড় দেশে পরিণত হয়, এই তথ্যগুলো খুব সহজভাবে লেখক ‘বৈচিত্র্যময় কানাডা: প্রাগৈতিহাসিক থেকে বর্তমান’ গ্রন্থে তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি লেখক ননীগোপাল প্রাগৈতিহাসিক কানাডার ভৌগোলিক গঠনপ্রণালী নিয়েও গ্রন্থটিতে আলোচনা করেছেন। বইটির সামনের ফ্ল্যাপে লেখক নিজেই বলেছেন, ‘প্রাগৈতিহাসিক কালে কানাডায় মানবজাতির আগমনের সুস্পষ্ঠ ইঙ্গিত পাওয়া গেছে … অতীত ও ক্রমবিকাশের কিছু প্রসঙ্গ ধারণ করে বাংলায় আলোকপাত করতে এই গ্রন্থ রচনার প্রয়াস।‘

নায়াগ্রা ফলসের রহস্যময়তা আর সৌন্দর্যের কথা সম্ভবত অনেক দেশের ভূগোল বইয়ে ছাত্রছাত্রীরা পড়ে থাকে। কাজেই যারা কখনও কানাডা আসার সুযোগ পায়নি, তারাও নায়াগ্রার জন্য ভালোবাসা অনুভব করেন। জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিনের ‘স্বপ্নের ইমিগ্রেশন’ বইয়ের নায়িকা তিথিকে দেখেছি স্কুলে ‘আমার স্বপ্ন’ রচনা লেখার সময় নায়াগ্রা ফলস দেখার কথা লিখেছিল। এমন আরও অনেক মানুষ আছেন যারা হয়তো নায়াগ্রা ফলস দেখেছেন বা দেখেননি, কিন্তু নায়াগ্রা সম্পর্কে জানতে চান। তাদের জন্যই লেখক ননীগোপাল অনেক যত্ন করে ‘নায়াগ্রার জন্ম: একটি ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস’ অধ্যায়টি লিখেছেন যেখানে বরফযুগ থেকে শুরু করে নায়াগ্রার জন্ম, বিবর্তন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, নায়াগ্রার বর্তমান চিত্র, নায়াগ্রার সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ নিয়ে লিখেছেন এবং প্রচুর তথ্য খুব সহজভাবে উপস্থাপন করেছেন।   

কনফেডারেশনের মাধ্যমে গঠনের শুরু থেকেই কানাডা বিশ্বের প্রায় সকল দেশের মানবিক আহবানে সাড়া দিয়ে আসছে। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের ‘মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র (Universal Declaration of Human Rights)’  প্রস্তুতের সময় কানাডার ভূমিকা ছিল অসামান্য। সিরিয়া যুদ্ধের সময় কানাডা নভেম্বর ২০১৫ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৬ পর্যন্ত চার মাসে মোট ২৫ হাজার সিরিয়াবাসীকে অভিবাসী ভিসা দিয়েছে এবং তাদেরকে কানাডায় বাস করতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়েছে।  সরকারি ওয়েবসাইট থেকে জানা যায় যে  ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের কারণে কানাডা সরকার ‘দ্যা স্পেশাল ইকোনমিক মেজার্স (রাশিয়া) রেগুলেশ এন্ড দ্যা স্পেশাল ইকোনমিক মেজার্স (ইউক্রেন) রেগুলেশন (Special Economic Measures (Russia) Regulations and the Special Economic Measures (Ukraine) Regulations)’ ঘোষণা করেছে যার আওতায় যেসকল ইউক্রেনবাসী কানাডায় অভিবাসী হতে চান, তাদের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া সহ আরো অনেক মানবিক নির্দেশনা আছে। ‘বৈচিত্র্যময় কানাডা: প্রাগৈতিহাসিক থেকে বর্তমান’ গ্রন্থে পাঠক জানতে পারবেন প্রায় আড়াইশত বছর আগেও কানাডা মানবিকতার চর্চা করেছে। সেই সময় দাসপ্রথা বিলুপ্ত করার লক্ষ্যে কানাডার অবদানের কথা  ইতিহাসের স্বাক্ষী। গ্রন্থটির ‘আন্ডার গ্রাউন্ড রেলরোড: দাসপ্রথা বিলোপের গোপন কাহিনী’ অধ্যায়ে এবিষয়ে বিস্তারিত লেখা হয়েছে। লেখক ননীগোপালের তথ্যানুসারে ১৭৯৩ সালে কানাডা একটি বিধানে বলেছিল ‘কোনো ক্রীতদাস ব্যক্তি আপার কানাডায় (অন্টারিও) পৌঁছলে সেখানে সাথে সাথে তাকে  মুক্ত বলে ধরা হবে’ (পৃ ৬৭)।

মানবতার জন্য কানাডা আজও স্থানপাত্র নির্বিশেষে হাত বাড়িয়ে দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশ থেকে কানাডায় আসা ৭০০ ছাত্রের নকল কাগজপত্র জমা দিয়ে ভিসা পাবার একটি খবর কানাডায় পত্রপত্রিকাতে আলোচিত হচ্ছে। এই ছাত্রেরা একটি জালিয়াত চক্রের মাধ্যমে কানাডার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির নকল কাগজপত্র জমা দিয়ে কানাডা আসার ভিসা পায় এবং কানাডাতে প্রবেশ করে। কানাডায় আসার পর তারা বুঝতে পারে যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের কোনো ছাত্রত্ব নিবন্ধন করা হয়নি। কানাডীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিষয়টি জানতে পেরে আইনানুসারে ছাত্রদের ডিপোর্ট করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও সরকার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে ডিপোর্ট সিদ্ধান্ত স্হগিত করেছে। এটি কানাডা সরকারের একটি মহৎ মানবিক সিদ্ধান্ত। আফগানিস্তান সংকটেও কানাডা হাত বাড়িয়েছিল। কানাডীয় সাহায্য সংস্থা সিডা (CIDA) পৃথিবীর বিভিন্ন অনুন্নত দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। 

কানাডা অভিবাসীদের দেশ। ফরাসি নাবিক জ্যাক কার্টিয়ারের তৈরি করা কানাডার মানচিত্র প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই স্পেন, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স যার যার ক্ষমতানুসারে কানাডায় বসতি স্থাপন করতে শুরু করে। এই সময় স্বাভাবিকভাবেই আদিবাসীদের সাথে কখনও সংঘর্ষ আবার কখনও সন্ধি হয়। ফার ব্যবসার লক্ষ্য নিয়ে ‘হাডসন বে’ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা হয়। আদিবাসীদের সাথে ফ্রান্স বা ব্রিটেন বা স্পেন থেকে আসা ব্যবসায়ী -অভিবাসীদের সাথে আদিবাসীদের বাণিজ্য চুক্তিও হয়। শুরু হয় খ্রিষ্টধর্মের প্রচার। আদিবাসী শিশুদের শিক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে ক্যাথলিক চার্চের পরিচালনায় তৈরি করা হয় আবাসিক বিদ্যালয়। সাম্প্রতিক সময়ে এইসব আবাসিক বিদ্যালয়গুলোতে শিশুদের গণকবর আবিষ্কার হয়েছে, জানা গিয়েছে আদিবাসী শিশুদের প্রতি এইসব বিদ্যালয় পরিচালকদের নিষ্ঠুর আচরণের আখ্যান। তখনকার এইসব অমানবিক কাজের জন্য ২০০৮ সালের ১১ জুন কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হার্পার আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও বিভিন্ন সময়ে তৎকালীন আবাসিক বিদ্যালয়ের নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এবং সহমর্মিতা জানিয়েছেন। যার ফলে আজ কানাডার ৬০০ স্বীকৃত ফার্স্ট নেশন ‘নিজ নিজ স্বাতন্ত্র্য, ভাষা, কলা এবং সংগীত নিয়ে বসবাস করে ‘(পৃ ১৫১)। মিডিয়ার কল্যাণে এইসব তথ্য পাঠকের অজানা নয়।  লেখক ননীগোপাল ‘বৈচিত্র্যময় কানাডা: প্রাগৈতিহাসিক থেকে বর্তমান’ গ্রন্থে কানাডীয় আদিবাসীদের অবদান বিষয়ে ছয়টি পূর্ণাঙ্গ অধ্যায় লিখেছেন যেখানে বেশ কয়েকটি উৎস থেকে পাওয়া তথ্যাদি সংকলিত করেছেন এবং তথ্যসূত্র দিয়েছেন। গ্রন্থটির ‘ক্যালগেরি শহরের রাস্তার নাম বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ’ অধ্যায়ে কানাডীয় ফার্স্ট নেশন নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাখা রাস্তার নাম নিয়ে পাঠকদের জানিয়েছেন। পড়তে গিয়ে পাঠক অনুধাবন করবেন, কানাডা যেমন নতুন অভিবাসীদের সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে, তেমনি কানাডীয় ফার্স্ট নেশনদের প্রতি শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশও করে থাকে। লেখকের এই বিশাল গবেষণা ও তথ্য উপস্থাপনা বাংলা ভাষায় কানাডীয় ফার্স্ট নেশন সম্পর্কে জানার একটি আনন্দদায়ক মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে।

১৮৬৭ সালের কনফেডারেশন গঠনের পর থেকে কানাডা সুনির্দিষ্ঠ নীতিমালার মাধ্যমে অভিবাসী গ্রহণ করে থাকে। দেশটির শিশু জন্মহার নিম্নগামী হওয়ার কারণে দেশটির সরকার শিশুজন্মকে উৎসাহিত করে এবং শিশুদের জন্য ভাতা দিয়ে থাকে। কবে, কখন এই ভাতার প্রচল হলো এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ভাতার কী কী বিবর্তন হয়েছে, ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশে এই ভাতার কী পরিবর্তন হয়  ইত্যাদি তথ্যাদিও লেখক তার গ্রন্থটিতে খুব যত্নের সাথে প্রদান করেছেন।

একই  সাথে লেখক কানাডার স্বাস্থ্য, শিক্ষা প্রভৃতি সুবিধার কথা বলেছেন। বলেছেন প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য কানাডীয় সরকারের নেয়া দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ছোট ছোট উদ্যোগের কথাও। একসময় সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করা লেখকের ভাষায়, ‘… যে সমাজতন্ত্রের স্লোগান দিয়েছি, তার অনেক কিছুই এখানে প্রতিফলিত। অবাক হয়ে ভাবলাম একটি পুজিঁবাদী দেশে আর্থিক এমন সুব্যবস্থা! … কানাডার সরকার ও জনগণ এসব শহীদের প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীল’ (পৃ ১১০)।

বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ক্ষেত্রে কানাডার রয়েছে অসাধারণ সাফল্য। লেখক ননীগোপাল ‘বৈচিত্র্যময় কানাডা: প্রাগৈতিহাসিক থেকে বর্তমান’ গ্রন্থে কানাডিয়ান বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ইতিবৃত্ত লিখেছেন। বইটি পড়ে পাঠক কানাডার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার যেমন ইন্সুলিন আবিষ্কার, স্নো মোবাইল আবিষ্কার, এরোপ্লেনের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, মহাকাশ গবেষণায় অবদান প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন। পাশাপাশি পাঠক জানতে পারবেন বৈজ্ঞানিক এই অগ্রযাত্রায় শহীদ হয়ে যাওয়া কর্মীদের কথা। লেখক ননীগোপাল গ্রন্থের ‘দীর্ঘতম ক্যান্টিলিভার ব্রিজ বিশ্বের বিস্ময়: ইঞ্জিনিয়ারদের তীর্থভূমি’  অধ্যায়ে কুইবেকে সেন্ট লরেন্স নদীর উপরে ক্যান্টিলিভার ব্রিজ তৈরির সময়কার বিপর্যয়ের কথা লিখেছেন যেটা আসলে ইঞ্জিনিয়ারদের অশ্রুর ইতিহাস পেশাদারিত্বের নীতি না মানার ফলে কত বড় ক্ষতি হতে পারে, তারই একটি উদাহরণ। এই শিক্ষাটিকে উজ্জ্বল করে রাখার জন্য ১৯২২ সাল থেকে কানাডার ইঞ্জিনিয়ার গ্রাজুয়েটদের আয়রন রিং পরানোর রীতি চালু হয়। লেখকের ভাষাযা,  ‘এই রিং-এর তাৎপর্য … যা স্মরণ করিয়ে দেয় কুইবেক ব্রিজের নির্মাণকালীন ত্রুটিবিচ্যুতি, কর্মে অবহেলা, যোগাযোগের অপ্রতুলতা এমনকি ব্যক্তিজীবনে অহংকার ও তার পরিণামের কথা’ (পৃ -৯৪)।

‘বৈচিত্র্যময় কানাডা: প্রাগৈতিহাসিক থেকে বর্তমান’ গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে মূর্ধন্য প্রকাশনী। প্রচ্ছদ করেছেন অরিজিৎ দেবনাথ। প্রচ্ছদে কানাডীয় আদিবাসীদের তৈরি চামড়ার ঘর, কানাডার বিনোদন আইকন ক্যানো এবং নায়াগ্রা ফলস, ইনসুলিন স্পেশাল দুই ডলার মুদ্রা এবং মহাকাশ গবেষণায় ব্যবহৃত রোবট কানাডার্মের চিত্র ব্যবহার করে কোলাজ তৈরি করা হয়েছে। কাজেই বলা যেতে পারে যে বইটির বিষয়বস্তুর সাথে মানানসই প্রচ্ছদ উপস্থাপিত হয়েছে। বইটির তথ্যাদি অনুসন্ধানের জন্য এবং  কানাডীয় ঐতিহ্যের প্রতি অনুরাগ থাকার কারণে লেখক ননীগোপাল দেবনাথকে প্রচুর বই, পত্রপত্রিকা পড়তে হয়েছে। তার তথ্যানুসন্ধান প্রচেষ্টা, গবেষণা এবং বইটি প্রকাশনার জন্য তাকে শ্রদ্ধা জানাই।

লেখক ননীগোপাল বুয়েট থেকে ১৯৭০ সালে প্রকৌশল বিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে বাংলাদেশের টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন বোর্ডে কর্মজীবন শুরু করেছেন। পরবর্তীকালে তিনি আবুধাবীতে দীর্ঘ ২৭ বছর প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করছেন। কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণের পর থেকে তিনি টরন্টো শহরে বাস করেছেন। নিজ দেশের ভৌগলিক বিবরণ, ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা একজন সুনাগরিকের দায়িত্ব। আর যিনি নিজেকে সমগ্র বিশ্বের নাগরিক মনে করেন, তাকে তো সারা বিশ্বের ভৌগলিক বিবরণ ও ইতিহাস জানতেই হবে। সেই বিবেচনায় কানাডায় বসবাসরত বাঙালিসহ সকল জ্ঞান পিপাসু ও অনুসন্ধিৎসু বাঙালি পাঠকের জন্য প্রকাশিত গ্রন্থটি  সময়পোযোগী এবং সুপাঠ্য।

……………………….

সামিনা চৌধুরী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর অধ্যাপনা পেশায় যুক্ত হন। সরকারি কলেজে অধ্যাপনাকালে বাংলাদেশ ইউনেস্কো কমিশনেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫ সালে যুক্ত হন ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশে-বিদেশে সামিনার মোট নয়টি পিয়ার রিভিউ প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে কানাডায় অভিবাসী সামিনা পাঁচ বছর ধরে টিডি ব্যাংকে কাস্টমার কেয়ার বিভাগে কাজ করছেন।