জীবনের অন্তিম লগনে পৃথিবীর পশ্চিম গগনে 

ড. দিলীপ চক্রবর্তী

সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠতে পারে কানাডার অভিবাসীদের সম্বন্ধে বলার ব্যাপারে আমি উপযুক্ত ব্যক্তি কি না। কারণ জীবনের প্রারম্ভে বা মধ্য গগনে আমি তো কানাডায় অভিবাসী হয়ে আসিনি। এসেছি প্রায় জীবনের অন্তিম লগনে, অর্থাৎ ৭০ বছর বয়সে। কানাডার অভিবাসী জীবনের অম্লমধুর অভিজ্ঞতাও  আমার জীবনে  বিশেষ নেই। আমি এখানে এসেছি ভারতবর্ষে আমার কর্মজীবন শেষ করে, প্রায় অনেকটা অতিথির মতো। সত্যি কথা বলতে গেলে, ওই হিসেবে আমার তো কানাডার অভিবাসী জীবনের কোনো প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেই। শুধু পরোক্ষ অভিজ্ঞতা, অর্থাৎ যারা এখানে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম করেছেন তাদের অভিজ্ঞতার কথা শুনে। তবে আমি যেহেতু জন্ম ভবঘুরে এবং যে কোন প্রজন্মের মানুষের সাথে মিশতে ভালোবাসি, তাই আমার অভিজ্ঞতার ঝুলি খুব ছোট না। আরেকটা কথাও বলা যায় যে, নিজে জলে পড়ে যাবার পর যে লোক কোনক্রমে হাত-পা নাড়িয়ে সাঁতার কেটে পাড়ে উঠে আসে, তার তুলনায় যে পাড়ে বসে ব্যাপারটা প্রত্যক্ষ করেছে, সে অনেক ভালো করে ঘটনার নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করতে পারে। সেই কারণেই আমার এই প্রয়াস।

একটা দেশ বলতে আমাদের মনে একটা ধারণার সৃষ্টি হয় যে, সেটা একটা ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে এক বিশাল অঞ্চল, যেখানে বহু মানুষের বাস, কর্মকাণ্ড। আয়তনের দিক দিয়ে কানাডা, রাশিয়ার পরেই, পৃথিবীর  দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। পূর্ব পশ্চিমে দেশটা এতটাই বিস্তৃত যে পূর্ব প্রান্তের স্থানীয় সময় পশ্চিম প্রান্তের স্থানীয় সময় থেকে সাড়ে চার ঘন্টা এগিয়ে।এখানে ছয়টি টাইম জোন। আয়তনে ভারতের আড়াই গুণ হলেও, জনসংখ্যা ভারতের প্রায় ৩০ ভাগের একভাগ। অধিকাংশ মানুষ খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী। শতাধিক ভাষাভাষী মানুষের দেশ হলেও বেশিরভাগ মানুষ ইংরাজিভাষী, তার পরে ফরাসিভাষী। এ দুটিই কানাডার জাতীয় ভাষা।

কথিত আছে যে, প্রাগৈতিহাসিক যুগে রাশিয়ার পূর্ব প্রান্ত এবং কানাডার পশ্চিম প্রান্তে  অবস্থিত বেরিং প্রণালী প্রায় জলশূন্য হয়ে যাওয়াতে বহু মানুষ জীবিকার তাড়নায় পায়ে হেঁটে রাশিয়া থেকে কানাডায় চলে আসে। কানাডার উত্তর অংশের ঠান্ডায় অনেকে মারা পড়েন এবং অনেকে দক্ষিণের কম ঠান্ডা অঞ্চলে চলে আসেন। কথায় বলে, কানাডার ঠান্ডা মাথায় মারে ডান্ডা। তখনকার ঠাণ্ডার অভিজ্ঞতা এক মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা। এখন ইন্টিরিয়ার হিটিং চালু হওয়াতে শীত কিছুটা সহনীয় হয়েছে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রায় ছয় মাস শীতের প্রকোপ বেশি থাকে না। তুষারপাতের কারণে  কয়েক মাস চারপাশ প্রায় বন্ধ থাকে। এখানে প্রচুর জমি, প্রচুর জল। সত্যি কথা বলতে, এত লেক পৃথিবীর কোন দেশে নেই এবং মেকানাইজড ফার্মিং-এর জন্য উৎপন্ন ফসল গুণগত এবং পরিমাণগত ভাবে ভাল, যদিও বছরের মাত্র ৫-৬ মাস এখানে চাষবাস করা সম্ভব হয়। 

আমি ভারতবর্ষ থেকে মাত্র কয়েক বছর আগে এখানে এসেছি বলে, ভারতবর্ষের সঙ্গে তুলনা না করে পারি না। ডলারে কোন জিনিস কেনার সময় মনে মনে ভারতীয় মুদ্রায় হিসাব করি। এখানে দক্ষিণে দশটা প্রদেশ এবং উত্তরে তিনটা অঞ্চল। দক্ষিণ  ঘনবসতিপূর্ণ এবং এখানকার অধিকাংশই বহিরাগত। বহিরাগতের সংখ্যা অন্টারিওতে সবচেয়ে বেশি। বাঙালির সংখ্যা  দুই বাংলা মিলিয়ে এই প্রদেশে সর্বাধিক। অন্টারিওর রাজধানী টরন্টো একসময় সমগ্র কানাডার রাজধানী ছিল। কানাডার বর্তমান রাজধানী অটোয়া অন্টারিও প্রদেশেই।  অন্টারিও এবং তার আশেপাশে অনেক লব্ধ প্রতিষ্ঠ বাঙালি বাস করেন। আজ এখানে নবাগত বাঙালির জন্য একটা সম্মান এবং ভালোবাসার আসন পাতা আছে, সেটা একদিনে হয়নি বা হাওয়ায় হয়নি। এর পিছনে বহু বাঙালির অবদান আছে। তাদের মধ্যে অনেকেই আজ পরলোকগত। তাদের আদর্শ আমাদের প্রেরণা, তাদের আশীর্বাদ আমাদের পাথেয়। টরন্টো শহরের কালচারাল ডাইভারসিটি দেখে মুগ্ধ হয়ে কলকাতার সুরসিক অভিনেতা, মীর সাহেব, মুগ্ধ হয়ে টরন্টো শব্দকে ভেঙে ‘তোর অন্ত’ করেছিলেন এবং তার সাথে নাই যোগ করে বলেছিলেন ‘তোর অন্ত নাই’। 

 টরন্টো শহর এবং আর তার আশপাশ মিলিয়ে এখানে বাঙালিদের হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং ইসলাম ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের মানুষের বহু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে সারা বছর বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান নিষ্ঠা ও শ্রদ্ধা সহকারে পালন করা হয়। দুর্গাপূজা, কালীপূজা, দোল উৎসব, ঈদ, মহরম ইত্যাদি। বৌদ্ধ এবং খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী মানুষও কম নন। বড়োদিন এবং বুদ্ধ পূর্ণিমাও উদযাপিত হয় উৎসাহের সাথে। অনেক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে সারা বছর ধরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। বাংলা নববর্ষ খুব জাঁকজমকের সাথে সকলে মিলে পালন করেন। অনেক মন্দিরে এবং মসজিদে ছোটদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা আছে। বাংলা ভাষা এবং বাংলা সংস্কৃতির সাথে ছোটদের পরিচয় করানোও হয়। 

বেশি বয়স, সময়াভাব এবং অর্থাভাবের কারণে খুব বেশি জায়গায় আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তবুও অন্টারিও প্রদেশের অনেক অঞ্চল এবং কানাডার পূর্ব প্রান্তের কিছু প্রদেশের কিছু স্থান দেখবার সৌভাগ্য হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, প্রিন্সটন, ফিলাডেলফিয়া,  বালটিমোর ওয়াশিংটন ডিসি , শিকাগো,  পিটসবার্গ বেড়ানোর  এবং মানুষদের সাথে অল্প স্বল্প আলাপ পরিচয়ের ও সুযোগ হয়েছে।

আমি টরন্টো রিজিয়নের ব্রাম্পটান শহরে থাকি। কানাডার বৃহত্তম বিমানবন্দর টরন্টো পিয়ারসন এয়ারপোর্ট পাশের শহর মিসিসাগাতে অবস্থিত। শহরতলীতে যাতায়াতের জন্য ‘গো ট্রেন’ আছে। নামটা আমার খুব ভালো লেগেছিল। ভেবেছিলাম যে যাওয়া শব্দের ইংরেজি ‘গো’ থেকে গো ট্রেন নাম। পরে জানলাম ‘জি ও’ হচ্ছে গভারমেন্ট অফ অন্টারিও-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। 

কানাডায় বসবাসকারী ভারতীয়দের মধ্যে শিখ ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা খুব বেশি। এটার কারণ কি এই, যে শিখ সম্প্রদায়ের লোকেরা পাঁচ সংখ্যাকে খুব গুরুত্ব দেন। শিখ  ধর্মাবলম্বীদের ‘ক’ অক্ষর যুক্ত পাঁচটা জিনিস শরীরে ধারণ করতে হয়,  যেমন কেশ , কাচ্ছা , কৃপাণ ,কঙ্গা (চিরুনি) আর  কড়া( লোহার বালা)। এবং ওদের প্রদেশে পাঁচটা প্রধান নদী – ঝিলম, চিনার, বিপাশা, শতদ্রু ও রাভী। সেই কারণেই প্রদেশের নাম পাঞ্জাব। পাঞ্জাব অর্থ পঞ্চ অপ-এর সমাহার। অপ মানে জল। তাই বোধহয় ওরা ল্যান্ড অফ ফাইভ লেক, অর্থাৎ সুপিরিয়র, মিশিগান হিউরান, এরি, আন্টারিও এই পাঁচ লেকের দেশ কানাডাকে এত পছন্দ করে।

বহু বছর আলীগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি,  বনস্থালী  ইউনিভার্সিটি এবং কয়েকটা কলেজে পড়ানোর পর অবসর জীবনে এখানে এসেছি। আমার স্ত্রী (ডক্টর শিপ্রা) কলেজ জীবন থেকে অবসর নিয়ে আমার সাথে এখানেই থাকেন।

প্রতিটি দেশের কিছু ভালো এবং কিছু মন্দ দিক থাকে। সীমিত অভিজ্ঞতায় আমার কাছে কানাডার যে ব্যাপারগুলো ভালো লেগেছে সেগুলো হচ্ছে – দেশটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। বায়ুদূষণ, জলদূষণ, শব্দদূষণ কম। রাস্তায় চলাকালীন মোটর গাড়ি সাধারণত হর্ন বাজায় না। হর্ণ তখনই বাজায় যখন চালকের মনে হয় অন্য গাড়ির চালক কিছু ভুল করেছে। অনেকটা আমাদের দেশের আওয়াজ দেওয়ার মতন ব্যাপার। এখানে মশা, মাছি, উকুনের উৎপাত কম। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের ইসলামের বর প্রার্থনা কবিতার দুটো লাইন মনে পড়ল –

“রাতে যেন কামড়ায় না মা ছারপোকা আর মশা 

আর দিনে যেন সইতে না হয় গায়ে মাছির বসা।”

এদেশে ছোটদের শিক্ষা ব্যবস্থা ভালো। স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামূলক। যে অঞ্চলে বাস, সাধারণত সেই অঞ্চলের স্কুলেই ছোটদের যেতে হয়। অভিভাবকের খরচা কম। স্কুলের পরিবেশ, খেলাধুলা, বিনোদনের ব্যবস্থা ভালো। শারীরিক শাস্তি দানের ব্যবস্থা নেই। এমন কি বাড়িতে মা-বাবা ছোটদের মারধর করলে এখানের বাচ্চারা নাইন ওয়ান ওয়ান কল করে পুলিশ ডেকে মা-বাবার বিরুদ্ধে নালিশ করে। আমাদের ছোটবেলায়, ছোটদের মারধর করার ব্যাপারটা, সে বাড়িতে হোক বা স্কুলে – খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। একটা ছড়া শুনতাম ছোটকালে –

“ঠিক কথা বলেছেন নবনীতা সরকার ,

ছেলেদের মাঝে মাঝে মারধর দরকার।“

এখানে স্বাস্থ্যপরিসেবা ভালো। সিনিয়র সিটিজেনদের ডাক্তার, টেস্ট, অপারেশন ট্রিটমেন্ট সবই প্রায় বিনা খরচে। ওষুধও প্রায় বিনামূল্যে। অধিকাংশ লোকের চিকিৎসার বেশিরভাগ খরচ ইন্সুরেন্স কোম্পানি বা এমপ্লয়ার দেয়। অবশ্যই সব শুনে ভাববেন না যে কানাডা দেশবাসীর জন্য স্বর্গরাজ্য এবং এখানকার সরকার সব রকম ব্যবস্থা করেন এবং নাগরিকদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। ঘটনা অন্যরকম। সরকার পরিষেবা দেয় দেশবাসীর উপর অনেক ট্যাক্স চাপিয়ে। কথায় বলে কানাডা বাসির দুটো জিনিস থেকে পরিত্রাণ নেই – শীতের মার আর ট্যাক্সের ভার। 

এখানকার পরিবেশ শান্তিপূর্ণ। লোকেদের ব্যবহার মোটামুটি ভদ্র। তারা নিয়মানুবর্তী এবং সময় জ্ঞান সম্পন্ন। সামাজিক পরিষেবা ভালো। ৯১১-এ ফোন করলে প্রয়োজনমতো পুলিশ, দমকল অথবা এম্বুলেন্স চলে আসে বাড়িতে। 

আর ভারতবর্ষের তুলনায় এখানকার যা যা খারাপ আমার মনে হয়েছে সেগুলো হলো – পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আকর্ষণ কম। আত্মীয়তার বন্ধন শিথিল। শিক্ষকদের প্রতি ছাত্রদের এবং বড়দের প্রতি ছোটদের শ্রদ্ধা কম। বয়সে বড়দের গুরুজন না মানা, কোন গুরুতর অপরাধ না। একজন শিক্ষক বলেছিলেন যে, ছাত্র হিসেবে শিক্ষকের প্রহার এবং শিক্ষক হিসেবে ছাত্রদের প্রহার সহ্য করতে হয়েছে। অনেক ছাত্রেরা শিক্ষকদের নাম ধরে ডাকে,  যা আমার খুব অস্বস্তিকর লাগে। ছেলেমেয়েরা স্বাবলম্বী হলে তারা বাবা-মার সাথে না থেকে আলাদা ভাবে থাকা পছন্দ করে জীবন সাথী নির্বাচনে নিজেরাই নির্ণায়ক। বড়দের ভূমিকা নামমাত্র। এখানে বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা বেশি। অনেকের কাছে  “ম্যারেজ ইজ এ হ্যাপি প্রিলিউড টু এন আদারয়াইজ ডাল ড্রামা, দ্যাট ইজ ম্যারেড লাইফ।“

বিদেশে বাঙালি সজ্জন – কথাটা সত্যি। একটা কথা শুনতাম। যেখানেই বাঙালি সেখানেই মা কালী, সেখানেই গলাগলি, পরে দলাদলি, শেষে চুলোচুলি। এখানে দলাদলি থাকলেও বিশেষ প্রকট রূপে নেই। বাঙালিদের মধ্যে মতান্তর থাকলেও প্রকাশ্যে মনান্তর নেই। যেটুকু দলাদলি আছে সেটাকে “একসেপশন প্রুভ দা রুল” নিয়ে মিলেমিশে থাকতে পারি। বিদেশে বাঙালি সুন্দর। কে কোথায় সুন্দর এ কথা উঠলেই আমার সঞ্জীবচন্দ্রের  ভ্রমণকাহিনী “পালামৌ” এর সেই বিখ্যাত উক্তি মনে পড়ে, “বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।“ অনবদ্য এই লাইনের সাথে মজা করে অনেকে আরও দুটো লাইন যোগ করে বলেন

“ঘটিরা কলকাতায়  বাঙালরা  ফরিদপুরে।”

এখানকার বেশিরভাগ লোকের বেতন ঘণ্টা হিসেবে। শনি, রবি ছুটি। তার জন্য কোন বেতন পাওয়া যায় না। বছরে ১০-১২ দিন সবেতন জাতীয় ছুটি। নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি সহজে পাওয়া যায় না। প্রথমে অনেককেই অড জব করতে হয়। অনেক কোয়ালিফায়েড ডাক্তারকে দেখা যায় এখানে প্রথমে ট্রাক ড্রাইভারি করতে বা অন্য ছোটখাটো কাজ  করে নিজের জীবন অতিবাহিত করতে। পরের দিকে আস্তে আস্তে ভালো চাকরি পেতে পারে। বেতন ঘন্টায় ১৫ ডলারের মতো অড জবে। ভালো চাকরির বেতন বেশি। জিনিস এবং পরিষেবার দাম স্বাভাবিক কারণে আমাদের দেশে থেকে অনেক বেশি। লোকেরা চায়ের চেয়ে কফি বেশি পান করে। ছোট এক কাপ কফির দাম ভারতীয় মুদ্রায় ১০০ টাকা। এখানে ব্যবসায় অল্প কটা প্রতিষ্ঠানের মনোপলি। যেমন ওয়াল মার্ট, হোম ডিপো, বেস্ট বাই, সিয়ার্স, নো ফ্রিলস ইত্যাদি। পরিবহন ব্যয়বহুল যদিও অনেক জায়গায় সিনিয়র সিটিজেনদের ভাড়া কম লাগে। পেট্রোল তুলনায় সস্তা। এখানে পেট্রলকে বলে গ্যাস। গ্যাসোলিনের সংক্ষিপ্ত রূপ। গাড়িতে সিট বেল্ট বাঁধা আবশ্যক। ছোটদের জন্য স্পেশাল সিটে বসাতে হবে। হাসপাতালে কোন শিশুর জন্ম হলে বাড়ি যাবার আগে তার নাম পাকাপাকি জানিয়ে দিতে হবে। শুনেছি এক দম্পতি হাসপাতাল ছাড়া আগে শিশুর নাম না জানানোয় হাসপাতালে বার্থ সার্টিফিকেটে শিশুর নাম লেখা হলো এফ এন ইউ শর্মা । এফ এন ইউ অর্থাৎ “ফার্স্ট নেম আননোন”।

রাস্তাঘাট খুব পরিষ্কার। রাতে বরফ পড়লে ভোর চারটে থেকে রাস্তা পরিষ্কার করা হয়। রাস্তার পাশের ফুটপাতকে বলে সাইডওয়াক। বাড়ির সামনের সাইডওয়াকে তুষারপাত হলে সেটা পরিষ্কার করার দায়িত্ব বাড়ির মালিকের। তা না করলে যদি কোন পা হড়কে পড়ে গিয়ে আহত হয় তাহলে বাড়ির মালিককে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। এখানে লিফটকে বলে এলিভেটর। ট্রামকে বলে স্ট্রিটকার। পাতাল রেলকে বলে সাবওয়ে। বাথরুমকে বলে ওয়াশরুম। কিছু কিছু শব্দের বানান একটু আলাদা। এখানে আমেরিকান এক্সেন্ট চলে। কিছু শব্দের বানান এক হলেও উচ্চারণ ভিন্ন যেমন সিডিউলকে এখানে বলে স্কেজিউল।

এখানে নির্বাচনের ব্যাপারটা নীরব এবং শান্তিপূর্ণ। মাইকের উৎপাত নেই। নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখের প্রায় একমাস আগে থেকে ভোটদাতা নিজের সুবিধা অনুযায়ী নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে ভোট দিতে পারেন। ভোটের দিন ছুটি থাকে না। 

সবশেষে বলি, কানাডা এবং ইউএসএ’র নাগরিকদের উভয় দেশে যাওয়ার জন্য ভিসা লাগে না। ইতিহাসের পথ বেয়ে আজ দুই জার্মানি এক হয়ে গেল, দুই ভিয়েতনাম এক হয়ে গেল। এভাবে ভিসার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেল ওরা। তাহলে আমরা ভারত উপমহাদেশের ভারত পাকিস্তান বাংলাদেশের নাগরিকরা এই উপমহাদেশে যাতায়াতের জন্য এই ভিসার বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারি না?