কোড়কদী: ঐতিহাসিক এক গ্রাম অনুসন্ধান
মাসুদ রানা
দেশবিভাগের ক্ষত আমাদের জাতীয় মানসপট থেকে এখনও যে দূর হয়নি তা এপার-ওপার বাংলা কথাসাহিত্যিকদের লেখা-কথা-বলা থেকে উপলব্ধি করা যায়। হাসান আজিজুল হক রাঢ়বঙ্গের স্মৃতি যেমন ভুলতে পারেন না, তেমনি মিহির সেনগুপ্ত বরিশালের স্মৃতি ভুলতে পারেন না। উভয়ের লেখার মধ্যে জন্মভূমির স্মৃতিকাতরতা স্পষ্টতই প্রতিফলিত হয়। দেশবিভাগের জন্য যতোই না আমরা ইংরেজদের দোষ দেই আমাদের তৎকালীন ভারতবর্ষীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের কী কোনোও দোষ নেই। বলতে চাই আমাদের সাবেক কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ নেতৃত্ব কী এ থেকে নিজেদেরকে ক্রুটিমুক্ত রাখতে পারবেন? সংকীর্ণ ধর্মীয় গোড়ামীর রেষ তাই আমরা আজও বয়ে বেড়াচ্ছি। তাইতো মাঝে মাঝে দেখা যায় হিন্দু মুসলমানের সংঘাত। আমরা কি আজও এ থেকে মুক্তি পেয়েছি? জানি না কতোদিন এই ক্ষত আমাদেরকে নিস্কৃতি দেবে। আজও এ বাংলা থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নীরবে-নিভৃতে দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছে। কতোটুকুই বা আমাদের মিডিয়ায় আসে। আবার অনেকেই শুধু খাঁটি দেশপ্রেমের জন্যই এ বাংলায় রয়ে গেছে। তাদের কাছে কোনো ধর্মীয় পরিচয় বড় নয়। বড়ো হলো তাদের মাতৃভূমি। এ রকম একজন ব্যক্তির নাম আমি বলতে পারি কমরেড সত্য মৈত্র। তাঁর পরিবারের লোকজন কলকাতায় বাস করেন আর তিনি দেশপ্রেমকে বুকে নিয়ে আজও বাংলাদেশে পড়ে আছেন। ক’জন এরকম দেশপ্রেমিক হতে পারবে। আজ অবশ্য বাংলা বিভাজন নিয়ে কোনো কথা বলতে বসিনি। বলতে চাই একটা লুপ্ত প্রায় গ্রামের কথা। কথাটি আবার ঠিকও নয়; এ কারণে যে, গ্রাম লুপ্ত হয় না। লুপ্ত হয়েছে এর অতীত ঐতিহ্য। বাংলাদেশে এ রকম হাজারো গ্রাম আছে, যার অতীত ছিলো গৌরবোজ্জ্বল। কিন্তু কালের প্রবাহে তার সেই রূপ আর নেই। তেমনি একটি গ্রামের নাম কোড়কদী। গ্রামটি বর্তমানে ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলায় অবস্থিত।
কোড়কদী গ্রামে জন্ম নিয়েছিলেন বহুবিখ্যাত ব্যক্তি। দুই বাংলাসহ বিশ্বে যাহারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞানের বিখ্যাত অধ্যাপক ড. এল. ভাদুড়ী এই গ্রামেরই সন্তান। প্রথম বাঙ্গালি পোস্টমাস্টার জেনারেল রাধিকামোহন লাহিড়ী এই গ্রামেরই লোক। নলিনীমোহনের একমাত্র পুত্র অবনীমোহন লাহিড়ী সারা ভারত কৃষকসভার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
এই গ্রামেরই আর এক কৃতি সন্তান অবন্তী সান্যাল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্র ছিলেন। তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষার অধ্যাপক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি ফরাসি ভাষার সু-পণ্ডিত ছিলেন। আবার তাকে রম্যাঁ রঁল্যা গবেষকও বলা হয়। সাহিত্যিক অবন্তী স্যানালের ভারতবর্ষ: রম্যাঁ রল্যাঁ, প্রসঙ্গ রম্যাঁ রল্যাঁ, রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ রম্যাঁ রল্যাঁ, সাহিত্য দর্শন, চৈতন্যদেব: ইতিহাস ও অবদান Ñ গ্রন্থগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
মহাভারত-মঞ্জরী বইয়ের লেখক বঙ্কিমচন্দ্রর লাহিড়ী এ গ্রামেরই সন্তান। শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেও প্রায় আট বছর পরিশ্রম করে লেখেন এ বইটি। এই বইয়ের পূর্বে বীরকেশরী নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (১৮৯৮) এবং সম্রাট আকবর (১৯০১) গ্রন্থদুটি লেখেন। গ্রন্থদ্বয় গুজরাটি ও হিন্দিতে প্রকাশ এবং পাঠক কর্তৃক ব্যাপক সাড়া পায়। ভারতবর্ষের সাম্যবাদী আন্দোলনের এক পুরোধা ব্যক্তি অবনী লাহিড়ী তাঁর রচিত তিরিশ চল্লিশের বাংলা একটি মূল্যবান গ্রন্থ। তাঁর অন্য দুটি গ্রন্থ হলো Postwar Revolt of the Rural poor in Bengal এবং The Peasants and India’s Freedom Movement.
এই গ্রামেরই আর এক উজ্জ্বল নক্ষত্র কমরেড শ্যামেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। ১৯৩৪-৩৫ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন এবং পরবর্তিতে ফরিদপুর জেলার কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত হন। তাঁকে ফরিদপুর জেলা পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাও বলা হয়। তিনি জীবনের অনেক চড়াই-উৎরাই আর লড়াই-সংগ্রামে আজীবন ছিলেন মানুষের মুক্তির সারিতে। জীবনের প্রায় ২৪ বছর কেটে গেছে কারাগার এবং অন্তরীণ অবস্থায়। ভারত বিভাগের পর পাকিস্তান আমলে এক জাতীয় নির্বাচনে মেহনতী মানুষের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালবাসার কারণে শেখ মুজিব তাঁকে নাকি প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি শেখ মুজিবের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং বামপন্থী দলের পক্ষে নির্বাচনে দাঁড়ান। বিরোধী দলের প্রার্থী হওয়ার পরও শেখ মুজিব তাঁর নির্বাচনী কর্মী সভায় বলেছিলেন Ñ “প্রতিটি আসনে জয় চাই Ñ এই আসনেও চাই। কিন্তু তোমরা দেখবে কোনো কুরুচিকর এবং ব্যক্তিগত আক্রমণ যেন শ্যামেন্দ্র দার নামে না হয়। মনে রাখবে এই মানুষটা কিন্তু দেশের সম্পদ।”
কোড়কদী এক সময় দ্বিতীয় কলকাতা হিসেবে পরিচিত ছিলো। অনেকে আবার নাকি ছোট কলকাতাও বলতো। দুর্গাপুজোয় ১০-১২ টি পুজো মণ্ডপ হতো এই একটি গ্রামেই। বিজলী বাতিহীন সেই যুগে এই গ্রামে ছিল কেরোসিন চালিত ফ্রিজ। ঘরে ঘরে পাওয়া যেত বি.এ./এম.এ. পাশ করা লোক। আর এই গ্রামের লোকেরাই সারা ভারতেই শিল্প-সাহিত্য, রাজনীতি, খেলাধুলা এবং নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অবদান রেখেছিলেন।
শেকড় মানুষকে কখনো শেকড়হীন করে না। স্মৃতিকাতরতা মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু রাজনীতির কুটচালে কখনো মানুষকে হতে হয় শেকড়হীন; রাজনীতি আর ধর্মের শ্রেণিবিন্যাসে কখনো কখনো হতে হয় ভৌগোলিক সীমানার অন্য প্রান্তের বাসিন্দা। কিন্তু জন্ম নেয়া গ্রামকে স্মৃতি থেকে মুছে ফেলা যায় না। এই রকম অনুভূতি ব্যক্ত হয়েছে পূর্বের জন্মস্থান কোড়কদী গ্রামকে নিয়ে স্মৃতিচারণা। যেমন, দেবেন্দ্র কুমার লাহিড়ী লিখেছেন “ছেড়ে আসা গ্রামের কিছু ইতিকথা” নামক লেখায় -“… পাঁচ যুগ আগে নিজ গ্রামকে ছেড়ে চলে এসেছি অনেক বেদনা বুকে চেপে। যে গ্রাম আমার শৈশবের ক্রীড়া ক্ষেত্র, যৌবনের উপবন তা বার্ধক্যের বারানসী হতে পারল না। ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক নেতারা দেশভাগ মেনে নিলেন। র্যাডক্লিপের কলমের খোঁচায় আমার স্বদেশ হয়ে গেল বিদেশ। এপার-ওপার বাংলার বিচ্ছেদ ঘটে গেল সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজদের কুট কৌশলে। তাই ওপার বাংলা ছেড়ে বাস্তুহারা মনঃকষ্ট নিয়ে এপার বাংলায় চলে আসতে হল যদিও আমাদের ফরিদপুর জেলায় কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামা হয়নি।”
“… আমার হৃদয়-চুরি করা গ্রামের নাম কোড়কদী। বর্তমানে বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানার একটি বর্ধিষ্ণু মধ্য ও উচ্চবিত্ত বারেন্দ্র প্রধান গ্রাম।…
“অবনী লাহিড়ীর ভগ্নিপতি অধ্যাপক অবন্তীকুমার সান্যাল। অবন্তীদার কথা যথাস্থানে বলব। ছোট তরফের বট অশ্বথের শিকড়ে সমাচ্ছন্ন ভগ্ন পূজামণ্ডপের পরেই হীরালাল লাহিড়ীর দোকান ঘর। সম্মুখে বিশালাকার প্রাঙ্গণ Ñ বর্ষাকালে ব্যাডমিন্টন ও ছোটদের টেনিস বল খেলার মাঠ, চৈত্র শেষে পাট ঠাকুর চালানের প্রদর্শনী ক্ষেত্র। প্রাঙ্গণের দক্ষিণে ও পদ্ম পুকুরের উত্তর পাড়ে মেজো তরফ (হীরালাল, হেমন্তলাল, মহেন্দ্রলাল, পার্বতীচরণ, কেনু, নিশিকান্ত ও গিরিজাকান্ত প্রমুখ) এর যৌথ বৈঠকখানা ও তারের জালে ঘেরা ফুলবাগান। মেজো বাড়ির আঙ্গিনায় সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে হ্যাচাকবাতি জ্বালিয়ে যাত্রাপালা অভিনীত হতো। কেষ্ট যাত্রা, নিমাই সন্ন্যাস, কংসবধ, দুর্যোধনের দর্পচূর্ণ ইত্যাদি যাত্রা ছোটবেলায় শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়তাম। …
তিনি আরো স্মৃতিচারণ করেছেন –
“কলকাতায় গ্রামের যাঁরা বাস করতেন তাঁরা আমাদের গ্রামে কলকাতা কালচার আমদানি করেছিলেন। পূজায় সবাই দেশের বাড়ি ফিরতেন। বিজয়া সম্মেলন হতো। শ্রীনাথ ভট্টাচার্যের ছেলে রঘুনাথ ভট্টাচার্যের নির্দেশনায় থিয়েটার হলে তিন রাত্রি থিয়েটার হতো। একবার সতর্ক প্রহারার মধ্যে মুকুন্দ দাসের স্বদেশী যাত্রা হয়েছিল। সরকার নিষিদ্ধ পালা “ মায়ের বলি! জ্বরাক্রান্ত শরীর পোষাকে ডজনখানেক সোনা-রূপার মেডেল ঝুলিয়ে উদাত্ত সুরেলা কণ্ঠে দেশাত্মক গান গেয়েছিলেন মনে আছে। পুলিশ খবর পাওয়ার পূর্বেই শেষ রাতে পালকিতে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।…
বঙ্কিমচন্দ্র লাহিড়ী তার “ কোড়কদীর অতীত” প্রবন্ধে লিখেছেন – “… তাহা ব্যতীত এখানে বহু সান্যাল, ভাদুড়ী ও ভট্টাচার্য্যরে বসতি-দুই শতাধিক ঘর ব্রাহ্মণের বাস। অন্য কোন জাতি নাই বলিলেও চলে। লাহিড়ী, সান্ন্যাল, ভাদুড়ী মহাশয়রা বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ সমাজের রোহিলাপটীর কুলীন। আর ভট্টাচায্য মহাশয়রা ক্ষত্রীয়। এই ভট্টাচার্য্য বংশের মহাদিগি¦জয়ী পণ্ডিত রামধন তর্কপঞ্চানন এই বংশ ও গ্রামকে গৌরবান্বিত করিয়া গিয়াছেন। এখানে বহু টোল ও বহু উপাধিধারী ব্রাহ্মণ পণ্ডিত আছেন। গ্রীষ্মকালে গ্রামের চতুষ্পার্শ্ববর্তী বিল শুকাইয়া যায়। আর বর্ষাকালে গ্রামখানি ক্ষুদ্র দ্বীপে পরিণত হয়। তখন মনে হয়, গ্রামময় অসংখ্য একতল ও দ্বিতল অট্টালিকা জলের উপর ভাসিতেছে। এই গ্রাম দেখিতে এত সুন্দর যে, কি স্বদেশী, কি বিদেশী যিনিই দেখিয়াছেন, তিনিই মোহিত হইয়াছেন।”
কোড়কদী গ্রামে আরো ছিলো বড় বড় খেলার মাঠ, হাসপাতাল। সান্যাল, লাহিড়ী, ভাদুড়ী আর ভট্টাচার্য পাড়া মিলে ছিলো কোড়কদী গ্রাম। ১৫০ বছর পূর্বে গড়ে উঠা বিশাল অবয়বে রামধন তর্কপঞ্চানন পাঠাগার। এই পাঠাগারে দুষ্প্রাপ্য তালপাতার পুঁথির সংগ্রহ ছিলো।
১৯ শতকের শেষ দিকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরসহ সারা ভারতের গুণীজনেরা বিধবা বিবাহ বিষয়ে মত-বিনিময়ের জন্য কোড়কদী আসেন। কয়েকদিন আলোচনা চলে। রক্ষণশীল চিন্তার কারণে বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিস্তৃত যুক্তিতর্ক উপস্থিত করেন। সেই থেকে রামধন ভাদুড়ীর নাম হয় রামধন তর্কপঞ্চানন এবং সেই নামানুসারে রামধন তর্কপঞ্চানন লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে দেখা যায়, রামধন তর্কপঞ্চাননের ভাগ্নে কমিউনিস্ট নেতা সত্য মৈত্র বিধবা আভা মৈত্রকে বিবাহ করেন।
এই গ্রামেরই আর এক বিত্তশালী ব্যক্তি ছিলেন রাসবিহারী। তিনি ১৯০১ সালে নিজ উদ্যোগে তার নামানুসারে একটি উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। যা আজও রাসবিহারী উচ্চ বিদ্যালয় নামে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কোড়কদী গ্রামের আর একজন কৃতিমান নারী সুলেখা সান্যাল। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। সাহিত্যিক এবং বাম রাজনীতিক সুলেখা সান্যালের ২৬ বছর বয়সের ফসল নবাঙ্কুর উপন্যাস। একজন নারীর বেড়ে ওঠার কাহিনি বিধৃত হয়েছে এই উপন্যাসে। সাম্প্রতিক সময়ে এই উপন্যাসের ইংরেজি সংস্করণ বের হয়েছে এবং দি হিন্দু পত্রিকা উপন্যাসটিকে নিয়ে আলোচনা করেছেন। সুলেখা সান্যালকে নিয়ে বিস্তারিত জানা যাবে সুলেখা সান্যালের কথাসাহিত্য প্রবন্ধটিতে।
আলোচ্য বইটি সুব্রত কুমার দাস সম্পাদিত এবং এই বইয়ের অধিকাংশ লেখা সুব্রত কুমার দাস রচিত। অন্য লেখকরা হলেন: অলোক ভট্টাচার্য, শান্তিময় চট্টোপাধ্যায়, সুজাতা সান্যাল, মোজাফফর হোসেন, দেবাহুতি চক্রবর্তী, আবু সাঈদ মিয়া প্রমূখ। কোড়কদী গ্রামের আলোকোজ্জ্বল ব্যক্তিদের নিয়ে আলাদা আলাদা প্রবন্ধ রয়েছে। যেমন – বঙ্কিমচন্দ্র লাহিড়ী ও তাঁর মহাভারত মঞ্জরী , অবনী লাহিড়ী : তেভাগা আন্দোলনের প্রধান পুরুষ, শ্যামেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য্য : এক প্রতিবাদী সমাজ বিপ্লবীর কথা এবং অবন্তীকুমার সান্যাল ও তাঁর রম্যা রঁল্যা চর্চা শীর্ষক প্রবন্ধগুলো।
প্রতিটি লেখার মধ্যে আলাদা একটা তেজ আছে, আছে পর্যবেক্ষণ এবং তথ্য। লেখাগুলো পড়লে যে কোনো পাঠককেই দূর অতীতে নিয়ে যাবে এবং ঐতিহ্যবাহী একটি গ্রাম সম্পর্কে জানতে পারবেন।
বইটি তথ্যসমৃদ্ধ এবং সুখপাঠ্য হলে হালকা ধরনের চঞ্চল শাহরিয়ারের লেখাটি প্রকাশ না করলেও হতো। সত্য মৈত্রর মতো ত্যাগী ও প্রচারবিমুখ ব্যক্তিটিকে নিয়ে আলাদা প্রবন্ধ থাকা দরকার ছিলো। বইটিতে চারটি ইংরেজি প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ লিখেছেন দিল্লীর দৌলতরাম কলেজের অধ্যাপক কৃষ্ণা লাহিড়ী মজুমদার, যিনি অবনী লাহিড়ীর কন্যা। বাংলা ও ইংরেজি প্রবন্ধের সংমিশ্রণ আমার মতে ঠিক হয়নি। অনুবাদ করে প্রকাশ করলে ভালো হতো। এতে বইটির উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পেতো। কোড়কদীর মতো ঐতিহাসিক গ্রামকে নিয়ে গবেষণালব্ধ বইটির জন্য অবশ্যই সম্পাদক সুব্রত কুমার দাস প্রশংসা পাওয়ার দাবিদার। বইটি অজানাকে জানতে সহায়তা করবে বলে আমার দৃঢ় প্রত্যাশা।