কানাডার শিক্ষাব্যবস্থা
কানাডার শিক্ষা ব্যবস্থার সম্পর্কে আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসাবে। তারপরে কন্যার শিশুকাল থেকে শিক্ষার পথে ধাপে ধাপে তার এগোনোর অভিজ্ঞতা থেকে। যতটা জানি, তাই লিখছি। কিছু ভুল যে থাকবে না তা নিশ্চিত করে বলতে পারি না।
শিক্ষাব্যবস্থার দায়িত্ব কেন্দ্রের নয়, প্রতি প্রদেশের – কী করে উপযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ নাগরিক হিসাবে তৈরী করা যাবে, তারা যাতে আত্মনির্ভর হয়ে সমাজের বিভিন্নরকমের দায়িত্ব পালন করতে পারে। সংক্ষেপে বলি, কানাডাতে পাবলিক স্কুল বাধ্যতামূলক এবং তার জন্য পয়সা লাগে না – প্রাদেশিক সরকার (বা টেরিটরি) এর ব্যয় বহন করে। কেন্দ্রিয় সরকার শিক্ষা বাবদ কিছু অনুদান প্রত্যেক প্রদেশকে দেয়। পাবলিক স্কুলের জন্য জি-৭ দেশগুলির মধ্যে কানাডা সব চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করে। প্রাইভেট স্কুলে পড়তে হলে সে খরচ বাবা-মা’র।
নার্সারি স্কুলে ছোটরা দু-আড়াই বছর বয়সে অন্যান্য শিশুদের সাথে মেলামেশা করতে শেখে। চার বছর বয়সে প্রি-কিন্ডারগার্টেনে আর পাঁচ বছরে কিন্ডারগার্টনে খেলার মধ্য দিয়ে শৃঙ্খলা শেখানো মূল উদ্দেশ্য। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে ইংরেজিতে লেখা-পড়া, সংখ্যা পরিচয়ের পালা। আর দিনে একটা ক্লাস হয় ফরাসি শেখার জন্য। অন্তত কানাডার রাজধানী অটোয়াতে দ্বিভাষিক হবার ওপরে বিশেষ জোর দেওয়া হয়। এই প্রাথমিক বিদ্যালয় চলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত। তার পর উচ্চ মাধ্যমিক, সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পাঠ্য বিষয়গুলো ক্রমে কঠিনতর হয়, সাথে থাকে গান-বাজনা, সর্বসমক্ষে ভাষণ, বিজ্ঞানের প্রদর্শনী ও খেলা-ধূলার সুযোগ। বাবা-মা’র ইচ্ছে হলে ছেলে-মেয়েদের প্রথম থেকেই ফ্রেঞ্চ ইমারশনে দিতে পারে, যেখানে সব পাঠ্য বিষয় ফরাসিতে শেখানো হয়। সামান্য ইংরেজি শিক্ষাও সঙ্গে থাকে।
কৈশোর থেকে তারুণ্যের, তারপর যৌবনের শারীরিক আর মানসিক পরিবর্তনের সাথে সাথে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উচ্চ-মাধ্যমিকের প্রস্তুতি শুরু হয়। আরও অনেক বিষয়বস্তুর সাথে পরিচয় হয়, যেমন ইতিহাস, ভুগোল, কম্পিউটার ব্যবহার, সামাজিক বিজ্ঞান ইত্যাদি অনেক ধরণের বিষয়। বীজ বপন করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় আর কর্মজীবনের। অধিকাংশ প্রদেশে উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সোপান স্বরূপ। ভবিষ্যতের চিন্তা এখানেই শুরু – কোন কোন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়, ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেরা সেগুলো বেছে নিতে পারে। অন্টারিও প্রদেশে উচ্চমাধ্যমিক নবম থেকে দ্বাদশ গ্রেড, অন্যান্য অধিকাংশ প্রদেশে দশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি বা গ্রেড। কুইবেক প্রদেশে উচ্চ মাধ্যমিকের শেষ হয় দশম শ্রেণীতে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার আগে এক বছর প্রস্তুতির সময়, কলেজে। বিভিন্ন প্রদেশে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে যাবার বয়স বিভিন্ন। অন্টারিও, ম্যানিটোবা আর নিউ ব্রান্সউইকে ১৮ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামূলক আর অন্যান্য প্রদেশে ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত। উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া সম্পর্কে আরও বেশি দায়িত্ব নিতে শেখে, তার সাথে সাথে সামাজিক ভাবেও তাদের অভিজ্ঞতা বাড়ে – নাচ, গান, বাজনা, অভিনয়, খেলা আর নানা ধরণের প্রজেক্টের মধ্য দিয়ে। কখনও কখনও মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও এদের ভ্রমণের সুযোগ থাকে, অবশ্যই শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রীদের নেতৃত্বে। আমার মেয়ে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী যখন, তখন গিয়েছিল প্যারিসে। সেই আমাদের ছাড়া তার প্রথম বিদেশ ভ্রমণ। বাবা-মা, সন্তান – সবার জন্যই ভবিষ্যতের প্রস্তুতি।
ক্যাথলিক আর প্রাইভেট স্কুল ছাড়াও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য আছে নৈশ বিদ্যালয়। যে কোন কারণেই হোক যাদের দিনের বেলায় স্কুলে যাওয়া সম্ভব না, তারা সন্ধ্যাবেলায় ক্লাস করতে পারে, তাদের নির্বাচিত বিষয় শেখার জন্য। ইংরেজী বা ফরাসী ভাষা, কম্পিউটার, অংক, স্ট্যাটিসটিক্স বা অন্য কোন বিষয়। সাধারণত চাকুরীজীবিরাই এই বিদ্যালয়ে যায়, অথবা দিনের বেলায় স্কুলে যাবার সময় ছোট ছেলেমেয়েদের কারো কাছে রাখার অসুবিধার জন্য। আর এ সবকিছুর বাইরে আছে বাড়িতে লেখাপড়া করার সুযোগ। বাবা-মা প্রতি প্রদেশের পাঠ্যতালিকা অনুযায়ী ষোল বছর বয়স পর্যন্ত তাদের ছেলেমেয়েদের বাড়িতে পড়াতে পারে। অবশ্য তার জন্য বিশেষ অনুমতি নিতে হয়। সাধারণত স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয় সেপ্টেম্বরে, শেষ হয় এপ্রিল, মে বা জুনে। গ্রীষ্মের ছুটিতে কিছু বিষয় পড়ার সুযোগ থাকতে পারে। যারা প্রয়োজনীয় বিষয়ে এগিয়ে যেতে চায়, অথবা যারা পিছিয়ে পড়েছে তারা গ্রীষ্মের সময়ে ক্লাস নিতে পারে। ই-এস-এল (ইংলিশ এ্যাজ আ সেকেন্ড ল্যংগুয়েজ) হলো যাদের মাতৃভাষা ইংরেজি নয় তাদের ইংরেজি শেখার ক্লাস। উচ্চ-মাধ্যমিক বিদ্যালয় শেষ করার পরে কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বনির্বাচিত বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে বিএ, বিএসসি, এমএ, এমএসসি বা পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করতে পারে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজ্ঞ এই ধরনের পেশাগত ডিগ্রির জন্য অনেক বছরের শিক্ষার প্রয়োজন। আবার কেউ-বা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরে কমিউনিটি কলেজে গিয়ে কোন ব্যবসায়িক কাজ শেখে – যেমন কার্পেন্ট্রি, ডেন্টাল হাইজিনিস্ট, রেস্টুরেন্ট-এর কাজ ইত্যাদি। কেউ কেউ চাকরি করতে আরম্ভ করে। এক-আধটুকু তফাৎ থাকলেও মোটামুটি সব প্রদেশে বা টেরিটরিতেই এই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা। কোন কোন টেরিটরিতে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থা অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় খুব ভাল না। যেমন, শহরের স্কুলের দ্বাদশ গ্রেড আর এই সব গ্রামের স্কুলের দ্বাদশ গ্রেডের অনেক তফাৎ। স্বাভাবিকভাবেই, সুযোগ সুবিধার অভাব এর কারণ। কানাডাতে ‘কলেজ’ বলতে সাধারণত কমিউনিটি কলেজ বা টেকনিকাল স্কুল বোঝায়। সেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা সার্টিফিকেট বা ডিপ্লোমা পেতে পারে।
এই সব লেখাপড়ার জন্য খরচ কেমন? পাবলিক স্কুলের জন্য বাবা-মা’কে সোজাসুজি কিছু দিতে হয় না। আয়করের সাথে বা শহরের যে ট্যাক্স দিতে হয়, শিক্ষার জন্য ট্যাক্স তার সাথেই দিতে হয় সবাইকে। আমার ছেলেমেয়ে স্কুলে যায় না, তবু আমাকেও এখনও দিতে হয়। এই টাকা দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকার বেতন, বই-খাতা ইত্যাদি, স্কুল বাড়ির যাবতীয় খরচ, স্কুল বাস এই রকম সব কিছু খরচ বহন করা হয়। তবে প্রাইভেট স্কুলে ছেলেমেয়েকে পড়াতে হলে বছরে চার হাজার থেকে কুড়ি হাজার ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে। প্রাইভেট স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা সীমিত, সুতরাং শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রীরা প্রত্যেকের প্রতি অনেক বেশি মনযোগ দিতে পারেন। বিশেষ ধরনের লেখাপড়ার ও তার বাইরে অন্যান্য আরও অনেক কিছু শেখার সুযোগ থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক হবার আগেই জীবনের শিক্ষার অনেক বেশি প্রস্তুতি হয়। বোর্ডিং স্কুলে খরচ অনেক বেশি, পঞ্চাশ হাজার ডলার হতে পারে। তার মধ্যে খাওয়া, থাকা, এই ধরণের সব প্রয়োজন মেটানোর ব্যবস্থা থাকে। এ ছাড়াও ক্যাথলিক স্কুল আছে। সেই সব স্কুলে বছরে দশ হাজার ডলার খরচ হতে পারে। এরপরে আছে বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে কানাডার নাগরিক হলে ছয় হাজার থেকে আট হাজার ডলার দিতে হতে পারে। অন্য প্রদেশ বা অন্য দেশ থেকে এলে আরও বেশি লাগতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়-এর ফীজ ছাড়াও থাকা-খাওয়ার খরচ এর ওপরে। ছাত্র-ছাত্রীরা প্রফেসরদের রিসার্চ- বা টিচিং-এ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে কাজ করে পড়ার ও থাকা-খাওয়ার খরচ চালায়, যেমন আমি করেছিলাম প্রথম বছরে। তবে অনেকে ভাল ছাত্র-ছাত্রী হিসাবে স্কলারশিপ পেতে পারে। আমি দ্বিতীয় বছর থেকে ভাল রেজাল্টের জন্য স্কলারশিপ পেয়েছিলাম। ভাল রেজাল্টের জন্য যারা স্কলারশিপ পায় তাদের কম সময় (সপ্তাহে দশ ঘণ্টা) প্রফেসরদের ক্লাস নেওয়া অথবা রিসার্চের কাজে সাহায্য করতে হয়। কোন কোন ইউনিভার্সিটিতে কো-অপ প্রোগ্রাম থাকে। ছাত্র-ছাত্রীরা একটা টার্ম (সাধারণত চার মাস) পড়াশোনা করে, তারপর একটা টার্ম চাকরি করে। চাকরীর জন্য দরখাস্ত দিতে হয়, তারপর যে সব কোম্পানি এ্যাপ্রেনটিস হিসাবে ছাত্র-ছাত্রীদের নিতে চায়, তারা ওদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে নির্বাচিত করে। তাদের ইন্টারভিউ নেয়, পছন্দ হলে তাদের চাকরির অফার দেয়। আমার কন্যা কো-অপ প্রোগ্রামে ইউনিভার্সিটি অব ওয়াটারলুতে ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছিল – কো-অপ ছাত্রী হিসাবে সে অনেক কোম্পানিতে কাজ করেছে, এমন কী ব্রাজিলের একটা কোম্পানিতেও। এইভাবে পড়াশোনা করার একটা অসুবিধার দিক হোল এক বছর বেশি সময় লাগে ডিগ্রি পেতে। সাধারণত অন্যান্য প্রোগ্রামে যেখানে চার বছর লাগে ডিগ্রি পেতে, কো-অপ প্রোগ্রামে সেখানে পাঁচ বছর লাগে। তবে একটা বিশেষ সুবিধা হলো যে বাস্তব জগতে সত্যিকারের কাজের অভিজ্ঞতা থাকায় ভবিষ্যতে ভাল কোম্পানিতে, ভাল চাকরি পেতে সুবিধা হয়। এই প্রসঙ্গে বলি, যুক্তরাজ্যের তুলনায় কানাডাতে লেখাপড়ার জন্য খরচ কম, বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়ে।
কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মোটামুটি তিন রকমের – ১) রিসার্চ বা গবেষণামূলক, ২) প্রাইমারী বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে শুধু স্নাতক-নিম্ন সার্টিফিকেট দেওয়া হয়, আর ৩) সমগ্র (কম্প্রিহেনসিভ) বিশ্ববিদ্যালয়। ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো, ম্যাকগিল ও ইউনিভার্সিটি অব বৃটিশ কলাম্বিয়া প্রথম ধরনের। মাউন্ট এ্যালিসন, ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটি দ্বিতীয় ধরনের, আর তৃতীয় ধরনের ইউনিভার্সিটি হোল ইউনিভার্সিটি অব ওয়াটার্লু, সাইমন ফ্রেজার ইত্যাদি, যেখানে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও গ্র্যাজুয়েট পড়াশোনা, রিসার্চ ও আবিষ্কারের সুযোগ থাকে। ইউনিভার্সিটি অব অটোয়া আর কার্লটন ইউনিভার্সিটিও তৃতীয় ধরনের। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা স্নাতক (বিএ বা বিএসসি), এমএ বা এমএসসি, অথবা আরও উঁচু পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে। কেউ কেউ তার পরেও গবেষণার কাজ করার জন্য পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ফেলোশিপ নিয়ে কর্মজীবনের প্রবেশ করার আগে আরও কিছুদিন থাকে। স্নাতক হবার জন্য চার বছর লাগে, এমএ বা এমএস-সি তে আরও দুই বা দেড় বছর, পিএইচডি করতে কতটা সময় লাগবে তা অনিশ্চিত, গবেষণার বিষয়ের ওপরে নির্ভর করে। আইন, ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে অনেক সময়ে বেশি সময় লাগে। ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো, ইউনিভার্সিটি অব মন্ট্রিয়ল, কুইনস ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ওয়াটার্লু, ম্যাকগিল, ইউনিভার্সিটি অব বৃটিশ কলাম্বিয়া, ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টা, ক্যালগেরী ইউনিভার্সিটি এইগুলো বেশ নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়।
কানাডার শিক্ষাব্যবস্থা পৃথিবীর অন্যান্য অধিকাংশ দেশের তুলনায় শ্রেয় বলে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর অন্যতম কারণ হিসাবে বলা হয় যে এখানকার স্কুলে – নার্সারী, প্রি-কিন্ডারগার্টেন থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্য্যন্ত সব স্তরে শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রীদের অনেক যত্নে নির্বাচিত করা হয়। তাদের এর জন্য বিশেষ ধরনের পড়াশোনা করতে ও ট্রেনিং নিতে হয়। যেসব ছেলেমেয়ের সাধারণ ক্লাসে শেখার জন্য কোন অসুবিধা থাকে (learning disabilities) তাদের প্রতি বিশেষভাবে মনযোগ দেওয়া হয়। ঠিক তেমনি, যেসব ছেলে-মেয়ে অন্যদের থেকে এগিয়ে যায় তাদের জন্য আরও উঁচু মানের বিশেষ পড়াশোনার ব্যবস্থা (enrichment) থাকে। এখানকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিউটরিয়াল, লেকচার এবং ল্যাবরেটরির কাজের সমণ্বয় থাকে। রিসার্চ বা গবেষণা, তথ্যের বিশ্লেষণ, প্রেজেন্টেশন, আলোচনায় অংশগ্রহণ, এবং তার সাথে সাথে এ্যাসাইনমেন্টের আয়োজন থাকে। অর্থাৎ সবরকমভাবে নিজস্ব চিন্তাশক্তির ব্যবহার শেখানো হয়, তার জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়। ছাপার অক্ষরে আছে বলেই অন্ধের মত সেকথা মেনে নেওয়া যে ঠিক না-ও হতে পারে সেটা বোঝার সুযোগ থাকে।
কানাডার শিক্ষাব্যবস্থার যে দিকটা আমার প্রথম থেকেই ভাল লেগেছিল সেটা হোল এখানে তথ্য মুখস্থ করার চেয়ে নিজের চিন্তা ভাবনার ওপরে, সৃজনশীলতার ওপরে জোর দেওয়া। সারা বছর ধরে একটা দু’টো করে ছোট ছোট পরীক্ষার সাথে সাথে প্রতিদিন ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রীরা কীভাবে অংশগ্রহণ করছে তার ওপরে নজর রাখা হয়। সারা বছর ধরে যেভাবে ছাত্র-ছাত্রীরা শিখছে তার ওপরে নির্ভর করে তাদের মোট ফলাফল নির্ধারণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যবিষয়, পাঠ্যবই ছাড়াও লাইব্রেরিতে নিজের দায়িত্বে, নিজের উৎসাহে আরও বেশি করে একটি বিষয় সম্বন্ধে জানার ও শেখার চেষ্টা করা – এই ধরনের সব শিক্ষা সারা জীবনের পাথেয় হয়ে থাকে।