কানাডার ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা এবং অর্জনসমূহ
খেলাধুলায় কানাডার একটি ঐতিহ্যবাহী সুদীর্ঘ ইতিহাস ও একরাশ অর্জন রয়েছে। যদিও প্রচীনকালে কানাডায় ইউরোপীয় অগ্রগামী বসতিগুলোতে, বেঁচে থাকার গুরুতর কাজের তুলনায় খেলা তুলনামূলকভাবে গুরুত্বহীন ছিল, তবে সামাজিক এবং বিনোদনমূলক কিছু কার্যক্রম প্রচলিত হয়েছিল। ফরাসি অভিবাসীরা ফ্রান্স থেকে তাদের সামাজিক জমায়েতের প্রতি ভালোবাসা উত্তরাধিকার সূত্রে নিয়ে এসেছিল।
ব্রিটিশ সৈন্য ও বসতি স্থাপনকারীদের আগমনের সময় তারা ক্রিকেট এবং অশ্বারোহীর মত খেলা সঙ্গে নিয়ে এসেছিল। তাছাড়া স্কটরা বিশেষ করে উত্তর আমেরিকায় গল্ফ এবং কার্লিং চালু করেছিল। যদিও কনফেডারেশনের আগে গল্ফ একটি প্রতিষ্ঠিত খেলা হয়ে ওঠেনি, তবে কার্লিং দ্রুত কানাডায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছিল। প্রথম স্পোর্টিং ক্লাবটি ছিল মন্ট্রিয়াল কার্লিং ক্লাব, ১৮০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত। তারপর থেকে লেডিস প্রিন্স অফ ওয়েলস স্নোশু ক্লাব (১৮৬১), মন্ট্রিয়াল লেডিস আর্চারি ক্লাব (১৮৫৮), রোয়িং রেগাটাস, ফিগার স্কেটিং চ্যাম্পিয়নশিপ ইত্যাদি গড়ে উঠেছিল।
১৯ শতকের মাঝামাঝি থেকে, খেলাধুলাকে নিয়ন্ত্রণ ও সংগঠিত করার জন্য একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা ছিল। মন্ট্রিয়াল এই অগ্রগতিতে নেতৃত্ব দিয়েছিল, অনেকগুলো ক্রীড়া সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল। যেমন মন্ট্রিয়াল ল্যাক্রোস ক্লাব, মন্ট্রিয়াল স্নোশু ক্লাব এবং মন্ট্রিয়াল সাইক্লিং ক্লাব ইত্যাদি। ১৯ শতকের শেষের দিকে খেলাধুলা দৃঢ়ভাবে সৃজনশীল এবং উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠে। ১৮৮০-এর দশকে ল্যাক্রোস এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে সংসদে আইন দ্বারা এই খেলাকে জাতীয় খেলা হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল।
১৯ শতকের শেষের দিক থেকে, বিভিন্ন জাতীয় সংস্থার বিকাশসহ খেলাধুলা আরো সংগঠিত হয়ে ওঠে এবং অনেক কানাডিয়ান পুরুষ ল্যাক্রোস, বেসবল, হকি, রাগবি ও ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় খ্যাতি নিয়ে অংশগ্রহণ করে। খেলাধুলায় নারীদের অংশগ্রহণ ১৯৬০ সাল অবধি সীমিত ছিল। নারী খেলোয়াড়দের জন্য উন্মুক্ত হতে শুরু হয় ৬০ দশকের প্রথম থেকে; এবং তারপর খেলার জগতে বিশষ করে অলিম্পিকে উল্লেখযোগ্য স্থানও দখল করে নিয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে দুটি জাতীয় খেলা ছিল: ল্যাক্রোস ছিল গ্রীষ্মের খেলা এবং আইচ হকি ছিল শীতকালীন খেলা।
খেলাধুলার উপর প্রভাব প্রযুক্তির অগ্রগতি থেকেও এসেছিল। স্টিমবোট, রেলওয়ে লোকোমোটিভ এবং বাষ্পচালিত ছাপাখানা এবং ধাপে ধাপে রেডিও/টিভি দ্বারা, খেলাধুলাকে জনসাধারণের সামনে আনা সম্ভব ও সহজ হয়েছিল ।
গ্রীষ্মকালীন খেলাধুলার তুলনায় কানাডা শীতকালীন খেলায় দক্ষতা প্রদর্শন ও অলিম্পিকে বেশি সাফল্য অর্জন করেছে। কানাডা নিজ মাটিতে বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ইভেন্টের আয়োজনও করেছে। যেমন ১৯৭৬ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক, মন্ট্রিয়াল, ১৯৮৮ সালের শীতকালীন অলিম্পিক, কেলগ্যারী, ১৯৯৪ তে বাস্কেটবল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ, টরন্টো, ২০০৭ এর ফিফা বিশ্ব কাপ ইউ-২০০সহ ২০১০ এর শীতকালীন অলিম্পিক, ভ্যাঙ্কুভার এবং ২০১৫ সালে ফিফা মহিলা বিশ্বকাপ, কানাডার ছয়টি শহরে পাঁচটি টাইম জোনে এ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
কানাডায় ১৮৬৭ সালে কনফেডারেশন গঠনের পর খেলাধুলা একটি নতুন যুগের দিকে এগিয়ে চলেছিল। ক্রিকেট, রোয়িং এবং ঘোড়দৌড়ের মতো পুরানো খেলাগুলো যখন গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তখন ল্যাক্রোসে এবং বেসবলের মতো খেলারও উত্থান হয়েছিল, খেলাধুলার আগ্রহ সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে সেটি ছিল আর এক ধাপ।
কিন্তু অবশেষে বেসবল গ্রীষ্মকালীন খেলা হিসাবে জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে এবং জনগণের এই আগ্রহের ফলে ল্যাক্রোসের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে থাকে। কানাডিয়ান বেসবল অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয়েছিল ১৮৭৬ সালে এবং তার পরেই প্রথম বেসবল লিগগুলো তৈরি হয়েছিল। বেসবলের প্রাথমিক সাফল্যের বেশিরভাগই দক্ষিণ-পশ্চিম অন্টারিওতে ঘটেছে, রেল যোগাযোগের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৈকট্যের কারণে।
নগরায়ন এবং শিল্পায়ন, ১৯ শতকে আধুনিক খেলাধুলার বীজ বপন করতে সাহায্য করেছিল এবং ২০ শতকের শুরুতে আরও বেশি প্রভাবের সাথে অব্যাহত ছিল। ফলে পেশাদার খেলোয়াড়দের পরিপক্কতা গড়ে উঠেছিল। রেডিও ও টেলিভিশন সম্প্রচারের মাধ্যমে, পেশাদার হকি প্রায় মন্ত্রমুগ্ধ জাতীয় শ্রোতাদের প্রশংসা অর্জন করেছিল।হকির শেকড় কানাডায় দৃঢ়ভাবে গেড়ে বসে এবং এটি দ্রুত ল্যাক্রোসেকে “জাতীয় খেলা” হিসাবে প্রতিস্থাপন করেছে।
কানাডায় ২০ শতকের প্রথম দিকে অপেশাদার খেলোয়াড়দের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এটি অনেক অ্যাথলেটিক অংশগ্রহণের ভিত্তি হিসাবে শুরু হয়। তবে পেশাদার ক্রীড়াগুলোর জন্য দরজা খোলা ছিল সব সময়, আবার জনগণের আগ্রহ এটিকে বাণিজ্যিকভাবে কার্যকরও করে তোলে। গ্রীষ্মকালীন খেলা হিসাবে বেসবলের জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও, দেশে একটি প্রধান লিগ ও ফ্র্যাঞ্চাইজ প্রতিষ্ঠিত হতে প্রায় ৭০ বছর সময় লেগেছিল। যাইহোক, টরন্টো, মন্ট্রিয়াল, হ্যামিল্টন, অটোয়া এবং উইনিপেগসহ ইন্টারন্যাশনাল লিগের জন্য কানাডার বেশ কয়েকটি শহরের দল গঠিত হয়েছিল। ১৯৬৯ সালে মন্ট্রিয়াল এক্সপোস এবং ১৯৭৭ সালে টরন্টো ব্লু জেস গঠনের পর, দুটি কানাডিয়ান শহরের বেসবল দল আমেরিকান-ভিত্তিক পেশাদার প্রধান লিগগুলোতে অংশগ্রহণ করে আসছিল। এমনকি টরন্টো ব্লু জেস একাধিক ওয়ার্ল্ড সিরিজ জেতার গৌরব অর্জন করেছিল।
ফুটবল আরেকটি খেলা যা কানাডায় ২০ শতকে সুস্থ বিকাশের অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল। পেশাদার বাস্কেটবল এবং ফুটবল দলও গঠিত হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে কানাডা ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশনে দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজের প্রতিষ্ঠা করে, টরন্টো রেপ্টরস এবং ভ্যাঙ্কুভার গ্রিজলিজস এবং দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
কানাডিয়ানরা প্যারালিম্পিকের বিভিন্ন খেলায়ও পারদর্শী হয়েছে। আন্তর্জাতিক প্যারালিম্পিক কমিটি ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কানাডার রবার্ট স্টেডওয়ার্ড, প্রতিবন্ধীদের ক্রীড়ার ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ, প্রথম কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
২০ শতকের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিগুলোর মধ্যে একটি ছিল নারীদের খেলাধুলা বৃদ্ধি। নারী আন্দোলনের অংশ হিসেবে, নারী ক্রীড়াবিদদের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং অনেক কানাডিয়ান নারী খেলোয়াড় ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড, সাঁতার, ডাইভিং, হকি, রোয়িং, সাইক্লিং, জিমন্যাস্টিকস, স্কিইং, স্পিড স্কেটিং, সকার এবং কুস্তির মতো ক্রীড়াগুলোতে দক্ষতা অর্জন করেছিল।
কানাডার ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার দীপ্তিমান কিছু মুহূর্ত
স্যান্ড্রা স্মির্লার অলিম্পিক স্বর্ণ জিতেছিলেন কার্লিংয়ে :
স্যান্ড্রা স্মির্লার ১৯৯৮ সালে জাপানের নাগানো গেমসে কার্লিংয়ে কানাডার প্রথম অলিম্পিক সোনা জয় করেছিলেন। সেই তারিখ পর্যন্ত, এটি ছিল কানাডার কার্লিংয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে হৃদয়স্পর্শী মুহূর্ত। ১৯৫০ সালে কানাডিয়ানদের জন্য সবচেয়ে আবেগমথিত একটি সময়—ইয়ংটাউন, নিউ ইয়র্ক থেকে টরন্টো পর্যন্ত ৩২-মাইলের সাঁতার, ১৬-বছর-বয়সী মেয়েটির জন্য কানাডাবাসী শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে ছিল।
কানাডিয়ান নারী খেলোয়াড়েরা ১৯২৮ সালের অলিম্পিকে ঝড় তুলেছিল :
আমস্টারডামে ১৯২৮ সালে প্রথমবারের মতো মহিলা খেলোয়াড়দের অলিম্পিক ট্র্যাক এবং ফিল্ড ইভেন্টে প্রতিযোগিতা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কানাডার নারী খেলোয়াড়দল, যেটিতে দ্রুত “অতুলনীয় ছয়” ডাকনাম অর্জন করেছিল, একটি চমকপ্রদ অভিষেক পরিচালনা করে। অ্যাঙ্কর ফ্যানি “ববি” রোজেনফেল্ড, জেন বেল, এথেল স্মিথ এবং মার্টল কুকের হয়ে শেষ করেছেন, উদ্বোধনী ৪X১00-মিটার মহিলাদের রিলেতে কানাডাকে স্বর্ণ জিতিয়ে। এথেল ক্যাথারউড হাই জাম্পেও সোনা জিতেছিলেন, কানাডার নারী খেলোয়ড়দের ট্র্যাক এন্ড ফিল্ড দল দুটি স্বর্ণ, দুটি রৌপ্য এবং একটি ব্রোঞ্জ জিতেছিল – এবং সমস্ত প্রতিযোগী দেশের মধ্যে সেরা ফলাফল করে, চ্যাম্পিয়নশিপ পেয়েছিল।
গ্রেটজকি ও লেমিউক্স জুড়ির ‘১৯৮৭ কানাডা কাপ জয়’ :
যদি রিপ্লে সংখ্যা একটি হাইলাইটের পরিমাপ হয়, তাহলে মারিও লেমিউক্সের বিজয়ী গোলটি সর্বকালের সেরাদের মধ্যে তার স্থান অর্জন করেছে। ১৯৮৭ সালের কানাডা কাপে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, চেকোস্লোভাকিয়া এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে দল অংশগ্রহণ করেছিল। কানাডা এবং ইউএসএসআর-এর মধ্যে তিন-গেমের ফাইনাল, হকির জগতে বিশিষ্টতম খেলা হয়েছিল বলা যায়। কানাডিয়ান ওয়েন গ্রেটস্কি এবং লেমিউক্স জয়ের শিরোপা ছিনিয়ে নিয়েছিল। একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা।
মাইক উইয়ার মাস্টার্স জিতেছিলেন :
বেঁটে, বাম-হাতি কানাডিয়ানদের গল্ফের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্টে যাওয়ার কথা নয় এবং টাইগার উডস তাদের কাঁধের উপর দিয়ে একটি নতুন সবুজ ব্লেজার নিয়ে আবির্ভূত হবেন। এর আগে কখনও ঘটেনি, এবং ২০০৩ সালের সেই গৌরবময় রবিবারের আগে ঘটেনি, যেদিন মাইক উইয়ার প্রথম কানাডিয়ান মাস্টার্স জিতে নিয়েছিলেন।
বারবারা অ্যান স্কট সোনার স্কেট চালান :
মাত্র ১০০ পাউন্ড ওজনের একজন নারী, বারবারা অ্যান স্কট তার জীবনে অনেক মূল্যবান মেডেল জিতেছিলেন। তিনি চারবার জাতীয় মহিলা ফিগার স্কেটিং চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। দু’বার বিশ্বচ্যাম্প। সেন্ট মরিৎজে, সুইজারল্যান্ড ১৯৪৮ সালে অলিম্পিকে সোনা জিতে আধুনিক সুপারস্টারডমে “কানাডার সুইটহার্ট” হয়েছিলেন।
টেরি ফক্স পূর্ব থেকে পশ্চিম কানাডা জুড়ে দৌড়ে চলেছিলেন :
তিনি সর্বকালের প্রভাবশালী সবচেয়ে বেশি দূরত্বের রানার। বাকি বিশ্বের চোখে, সম্ভবত কানাডিয়ান খেলাধুলার সবচেয়ে বিশিষ্টতম সময়। টেরি ফক্স ১৪৩ দিন ধরে প্রতিদিন প্রায় একটি ম্যারাথন দৌড়েছিলেন। এক পায়ে। তার বাম পায়ের সমস্ত পেশী ঠিক ছিল কিন্তু ১৮ বছর বয়সে ক্যান্সারে তার ডান পা হারিয়েছিলেন। ম্যারাথন অফ হোপ, লক্ষ্য নতুন ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য এক মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করা। তিনি আমাদের সর্বকনিষ্ঠ সঙ্গী “দ্য অর্ডার অফ কানাডা”। ফক্স ১৯৮১ সালে ২২ বছর বয়সে মারা যান। আজ ৫৬টি দেশে ৪,০০০টি টেরি ফক্স রান সংঘটিত হয় প্রতি বছর, কানাডায় তার নামে একটি পর্বতও রয়েছে।
বেন জনসন মুহূর্তের ব্যবধানে ১০০ মিটার সোনা জিতেছিলেন :
তখনকার জীবিত প্রতিটি কানাডিয়ান যারা ১৯৮৮ সালে সিউল অলিম্পিকে সেই ৯.৭৯ সেকেন্ডের উত্তেজনাপূর্ণ শ্বাসরোধ করা মুহূর্তের দর্শক তাদের মনে আছে সবার। উচ্ছ্বাসে ভেঙ্গে পড়া পুরো কানাডা। আমাদের হিরো, বেন জনসন, আমেরিকান কার্ল লুইসকে পরাজিত করেছেন!
সিডনি ক্রসবির সোনালি গোল :
২০১০ ভ্যাঙ্কুভার গেমসের চূড়ান্ত ইভেন্টের শেষ মুহূর্ত, জ্যারোম ইগিনলার পাস করেছে সিডনি ক্রসবির স্টিকের কাছে, ক্রসবি মার্কিন গোলকি রায়ান মিলারের প্যাডের মধ্যে এক শটে ছিনিয়ে নেন জয়। এটি কানাডার সর্বকালের সেরা অলিম্পিকের কেকের উপর নিখুঁত রং এর আইসিং ছিল। আয়োজক দেশ কানাডার জন্য স্বর্ণপদক ১৪ নম্বর – শীতকালীন অলিম্পিকের ইতিহাসে অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি সোনা, হুররে! মাত্র ২২ বছর বয়সী তরুণ ক্রসবি, যিনি ইতিমধ্যেই কানাডিয়ান হকির রক তারকা এবং আইকন হয়ে উঠলেন। “আমি শুধু শট করেছি। আমি জানতাম কোথায় নেট ছিল, কিন্তু আমি দেখতে পাইনি কোথায় গেছে,” ক্রসবি বলেছিলেন। এই অর্জন হয়েছে, সরাসরি কানাডিয়ান হকির বিদ্যায় ও অনুশীলনে।
টরন্টো ব্লু জেস ব্যাক-টু-ব্যাক ওয়ার্ল্ড সিরিজ জিতেছে :
এক অপ্রত্যাশিত সাফল্য। হতে পারে – হওয়া সম্ভব। পরপর দুটি ওয়ার্ল্ড সিরিজ! আটলান্টা ব্রেভসের বিরুদ্ধে ১৯৯২ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের দল টরন্টোর প্রথম বেসবল দল হয়ে ওঠা এবং সব জিতে নেয়া। রবি অ্যালোমার, ডেভ উইনফিল্ড, জন ওলেরুড, ডেভন হোয়াই – “ম্যানেজার গুণী সিটো গ্যাস্টনের সাথে কাজ করার অর্থ হল সাফল্য।” তারপর ১৯৯৩ সাল, জোলটিন’ জো কার্টার ফিলাডেলফিয়ার মিচ উইলিয়ামসকে তিন রানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় বারের বিজয়। টরন্টো শহর উৎসবে মেতেছিল। টরন্টো ব্লু জেসকে অন্টারিও স্পোর্টস হল অফ ফেম ঘোষণা করা হয়েছিল।
ডোনোভান বেইলি আটলান্টায় সোনা :
ডোনোভান বেইলি ১৯৯৬ সালের অলিম্পিকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। স্প্রিন্টারদের মধ্যে অনন্যভাবে, বেইলি কখনই কোনো ডোপিং কেলেঙ্কারিতে জড়িত হননি। একবারও না। সুতরাং, আটলান্টার সেই ১০০-মিটার লাইনে আটজন যখন তাদের লেন নিয়েছিল, আমাদের বেইলি পরিচ্ছন্ন ছিল। একটি প্রশ্ন তখনও বাতাসে ঝুলছিল: একজন মাদকমুক্ত রানার কি জিততে পারে? কিন্তু জয়ী হয়ে তিনি প্রমাণ করেছিলেন।
কানাডার হয়ে গোল করেন পল হেন্ডারসন :
একমাত্র খেলাধুলার মুহূর্ত যা নিয়ে কেউ বিড়বিড় করে না। কানাডা-রাশিয়া সিরিজের বিগত দিনের সেই তাৎক্ষণিক স্মৃতি, যাদের মনে আছে – স্নায়ুযুদ্ধ তখন পূর্ণ শক্তিতে। সামিট সিরিজ তাই বিশেষভাবে অর্থ বহন করেছিল। এটি কেবল হকি ছিল না, এটি ছিল প্রতিযোগী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির সৎ-থেকে-ভালো সংঘর্ষ। এনএইচএল বনাম রেড আর্মি। কানাডাকে হারানো যেতো, কারণ রাশিয়ানরা খুব ভালো ছিল। কিন্তু ইতিহাস যা লিখেছে তা বিপরীত। কানাডার হয়ে গোল করেছিলেন পল হেন্ডারসন – খেলার মাত্র ৩৪ সেকেন্ড তখন বাকি ছিল। হকি খেলার ইতিহাসে বিস্ময়কর নাটকীয় স্কোর। বিশ্বকে চমকে দিয়ে সিরিজ জয় কানাডার।
কানাডায় খেলাধুলার প্রতি গভীর ভালবাসা এবং আবেগ রয়েছে—অলিম্পিক গেমসের আয়োজন থেকে স্ট্যানলি কাপ এবং ওয়ার্ল্ড সিরিজ জেতা পর্যন্ত তাদের নিজ নিজ খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য বিশ্বে সেরা অনেক ক্রীড়াবিদ তৈরি করেছে। কানাডার খেলাধুলার সব অর্জন উদযাপন করা চাই, আরো সম্ভাবনাময় দিন আসছে বৈকি! কানাডার পুরাকালীন খেলাধুলা টোবোগান, স্নোশু, ল্যাক্রোস স্টিক এবং ক্যানোর জন্য আদিবাসী সংস্কৃতির কাছেও আজ আমরা ঋণী।
তথ্যসূত্র :