কানাডায় সাহিত্য উৎসব
জনসমাজ অর্থাৎ পাঠক বা শ্রোতৃমণ্ডলীর মধ্যে সাহিত্যকারদের ভূমিকা কী, এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বিশিষ্ট আদি কানাডীয় লেখক রিচার্ড ভ্যান ক্যাম্প একটি খুব সুন্দর কথা বলেন। “প্রতিটি প্রকাশিত লেখা এক একটি আলোর তীর, যা পৃথিবীর কোন কোনায় কোন পাঠকের মননে গিয়ে বিঁধবে তা লেখকরা জানেন না। জানার দরকারও নেই। যা প্রয়োজন তা হলো লেখক হিসেবে নিজের রচনাকে বিশ্বাস করা, সেটার কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পন করা। এবং পাঠকের মন ঠিক কীভাবে আলোকিত বা আলোড়িত হোল তা প্রত্যক্ষভাবে না জানতে পারলেও নিজের সৃষ্টির প্রতি এই নিঃসংকোচ বিশ্বাসে প্রতিদিন আবার নতুন করে নিষ্ঠা ও আশা নিয়ে নতুন রচনা করা।“ সাহিত্য উৎসব হলো সৃষ্টিসুখের এই পবিত্র অনুভূতির রসাস্বাদন ও উদযাপন।
কানাডীয় সাহিত্য উৎসবের বৈশিষ্ট হলো এর বৈচিত্র্যের সম্ভার। কানাডীয় সাহিত্য এখন শুধুমাত্র মূলধারার রচনাতে সীমাবদ্ধ নয়। ভৌগোলিকভাবে দেখতে গেলে এই বিশাল দেশটির প্রতি প্রান্তেই অনুষ্ঠিত হয় সাহিত্য উৎসব। সারা দেশ জুড়ে ৫০টিরও বেশি সাহিত্য অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় এবং নর্থ ওয়েস্টার্ন টেরিটোরিজ বা নিউফাউন্ডল্যান্ডের মতো অল্প জনসংখ্যার প্রদেশগুলিতেও রমরমিয়ে চলে এই উৎসব। ভাষাগত দিক থেকে দেখতে হলে প্রকাশের ভাষা এখনও প্রধানত ইংরেজি বা ফরাসি হলেও, কন্ঠের বৈচিত্র্য ও ব্যাপ্তি কিন্তু বিশাল। কত ধরনের মূল, প্রান্তিক ও মধ্যবর্তী সমস্ত অবস্থানের পরিচিতি ও চেতনা ধারণ করে চলেছে সমসাময়িক কানাডীয় সাহিত্য তার ইঙ্গিত পাওয়া যায় এই সাহিত্য উৎসবগুলি থেকে।
প্রথমেই যেই সাহিত্য মেলার কথা মনে আসে তা হলো টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যল অফ অথরস। দশদিন ব্যাপি অতি সম্ভ্রান্ত এই অনুষ্ঠানের সূচনা হয়েছিল ১৯৭৪ এ শুধুমাত্র ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার লেখকদের নিয়ে কিন্তু বর্তমান কানাডীয় জাতীয় পরিচয়ে যে লক্ষণীয় পরিবর্তন এসেছে, তা প্রতিফলিত করতে এখন এই অনুষ্ঠানে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে অন্যান্য ভাষার কানাডীয় লেখকদের, যার মধ্যে বাংলা অন্যতম। টরন্টোর হারবার ফ্রন্টের মনোরম পরিবেশে অনুষ্ঠিত এই সাহিত্য উৎসবে শুধুমাত্র আলোচনাচক্র বা বই থেকে পাঠ নয়, থাকে বিষয়ভিত্তিক কর্মশালা, বই প্রকাশ ও বিশেষ পুরস্কা সম্পর্কিত একাধিক কর্মসূচি। এ পর্যন্ত এই উৎসবে অংশ নিয়েছেন ২২ জন নোবেলজয়ী ও ১০০ জনেরও বেশি আন্তর্জাতিক সাহিত্যিক। এছাড়াও ২০০৮ থেকে এই উৎসবে সংযোজিত হয়েছে একটি নতুন আঙ্গিক – ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটরস প্রোগ্রাম, যেটির মাধ্যমে কানাডীয় প্রকাশকেরা অন্যান্য দেশের প্রকাশকদের সাথে আলাপ আলোচনা করতে পারেন ও ব্যবসায়িক সূত্রে আবদ্ধ হতে পারেন যাতে কানাডীয় সাহিত্য আন্তর্জাতিক পাঠক মহলে পৌঁছতে পারে। সারা বছরই বুক ক্লাবের বা টরন্টোলিট নামের স্থানীয় ও নবীন লেখকদের বই প্রকাশ অনুষ্ঠান হতে থাকলেও এই উৎসবের মূল কার্যসূচি অনুষ্ঠিত হয় সেপ্টেম্বর মাসে। তাছাড়া, এই উৎসবে প্রদান করা হয় দেশের বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী ও মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার, যেমন গভর্নর জেনারাল লিটেরারি আওয়ার্ড, রজারস রাইটার্স ট্রাস্ট আওয়ার্ড, আর-বি-সি টেলার প্রাইজ ফর নন-ফিকশন ইত্যাদি।
এমনই আর একটি বড় মাপের সাহিত্য উৎসব হলো অটোয়া ইন্টারন্যাশনাল রাইটার্স ফেস্টিভ্যাল, যার পরিচয়লিপি হলো ‘অটোয়া’স ফেস্টিভাল অফ আইডিয়াস সিন্স ১৯৯৭’। এই ‘ভাবনাচিন্তার উৎসব’ বছরে দুটি সময়ে উদযাপিত হয় – স্প্রিং অর্থাৎ এপ্রিল-মে নাগাদ একবার ও তারপর ফল অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে আরেকবার। থাকে কবিতা ক্যাবারে, বই থেকে পাঠ, বিজ্ঞানভিত্তিক বই এবং বিষয়ের ওপর আলোচনা চক্র, ইতিহাস ও জীবনীমূলক বইয়ের আলোচনা, ও বর্তমান সমাজের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর দর্শকবৃন্দের সঙ্গে আলোচনাচক্র।
কিংস্টন রাইটার্স ফেস্টের সূচনা হয় ২০০৬ সালে এবং পাঁচ দিনের এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন প্রায় ৭০ জনেরও বেশি লেখক ও শিল্পী। আলোচনাচক্র, সাক্ষাৎকার, পাঠচক্র ছাড়াও এই অনুষ্ঠানে থাকে অন্যান্য বিভিন্ন আয়োজন যেমন সাহিত্যভিত্তিক কুইজ, মৌখিক কবিতার প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। মন্ট্রিয়লে ব্লু মেট্রোপলিস ইন্টারন্যাশনাল লিটেরারি ফেস্টিভাল বহু-ভাষিক সাহিত্য উৎসবগুলির মধ্যে আরও একটি।
তাছাড়া রয়েছে অ্যালিস মানরো ফেস্টিভাল অফ দি শর্ট স্টোরি, যেখানে আপনি অংশগ্রহণ করতে পারেন ছোটগল্প লেখার কর্মশালায় এবং তারপর সুযোগ রয়েছে আপনার সদ্য রচিত ছোটগল্প মঞ্চে শ্রোতাদের সামনে উপস্থাপন করার। এ শুধু মানরোর সাবলীল মনোগ্রাহী গল্পের শৈলী ও মাধুর্যের উদযাপনই নয়, এই উৎসব সাধারণের লেখকসত্বার উদযাপনেরও।
বৈচিত্র্যের দিক থেকে দেখতে গেলে, বর্তমানে বেশ কিছু এশীয়-কানাডীয় গোষ্ঠি তাঁদের নিজেদের উদ্যোগে কিছু সাহিত্য উৎসব শুরু করেছেন যেখানে চর্চিত হয় দ্বৈত জাতিপরিচয় নিয়ে মানসিক দ্বন্দ্বের কাহিনি, তাঁদের শিকড় খোঁজার, ঐতিহ্য ধরে থাকার, নিজস্ব পরিচয় গড়ে ওঠার এবং সেটি যাপন করার গল্প। এমনই দুটি সাহিত্য উৎসব হলো ভ্যাঙ্ক্যুভারের লিটেরেশিয়ান উৎসব এবং ব্র্যাম্পটনের কেনেডিয়ান সাউথ এসিয়ান লিটেরারি ফেস্টিভাল। লিটেরেশিয়ানের তুলনায় অন্যটি খুবই নবীন। সবে ২০২৩ সালে সূচনা হয় কেনেডিয়ান সাউথ এশিয়ান লিটেরারি ফেস্টিভালের, যার উদ্দেশ্য দক্ষিন এশিয়ার বাইরে বিশ্ব দরবারে দক্ষিণ এশীয় সাহিত্যের ব্যাপ্তি, অবস্থান ও গুরুত্ব সম্বন্ধে আলোচনা, তাঁদের সাহিত্যচর্চার জন্য কানাডায় সম্ভাবনা, বিশিষ্ট দক্ষিণ এশীয় কানাডীয় সাহিত্যিকদের নিয়ে আলোচনা। তাছাড়াও, এই উৎসবের একটি মনোগ্রাহী পর্ব ছিল বাংলা, সিন্ধি, পাঞ্জাবি, হিন্দি, উর্দু ইত্যাদি ভাষায় কবি সম্মেলন ও এই ভাষাগুলির লেখকদের নিয়ে ভাষাভিত্তিক বৈঠক।
লিটেরেশিয়ান উৎসবটিতেও এশীয়-কানাডীয় সাহিত্যিকদের মূলধারার লেখক, পাঠক ও সমাজের সাথে পরিচয় করানো একটি মূল উদ্দেশ্য। প্রতি বছর এই উৎসবটি বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনার মাধ্যমে শ্রোতা দর্শকদের কাছে হয়ে ওঠে রীতিমতো শিক্ষণীয় একটি সমাবেশ। এবছরের বিষয়গুলি হলো পরিচয় পুনরুদ্ধার ও সাম্রাজ্যের প্রতি কৌতুক-চাহনি।
এই ক্ষেত্রে আরেকটি উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান হলো ব্রাম্পটনে অনুষ্ঠিত ফেস্টিভাল অফ লিটেরারি ডাইভার্সিটি। নামের সাথে কাজের সামঞ্জস্য রেখে ২০১৬ সালে শুরু হওয়া এই সাহিত্য উৎসবটি চেষ্টা করে জাতিগত, ভাষাগত, সংস্কৃতি ও পরিচয়গত সমস্ত রকমের প্রান্তিকতাসহ ভিন্নতা মূল মঞ্চে উপস্থিত করতে। এই মঞ্চ শুধু শ্রোতার সঙ্গে ভাববিনিময়ের জন্য নয়, বরং এটি ভাবনাচিন্তা ও লেখনী শৈলীর এক মুক্ত মঞ্চ, যেখানে লেখকরা একে অন্যের সাথে সংযুক্ত হয়ে বা শ্রোতাদের থেকে শক্তি পেয়ে সেই সমস্ত কঠিন, নির্মম বা অস্বস্তির কথা প্রকাশ করার অনুপ্রেরণা ও সু্যোগ পান যা সাধারণত একান্তে বা জনসমক্ষে, যে ভাবেই হোক, সহজ কাজ নয়।
শুধু কবিতা-কেন্দ্রিক উৎসবের সংখ্যাও কিন্তু নেহাত নগন্য নয়। এডমান্টন পোয়েট্রি ফেস্টিভাল, ক্যালগেরীর পিপলস পোয়েট্রি ফেস্টিভাল থেকে অটোয়ার ভার্স ফেস্ট – এই উৎসবগুলিতে শুধু পছন্দের কবিকে সাক্ষাতে দেখতে পাওয়া বা তাঁদের কথা শোনা নয়, কবিতা লেখার শৈলী শেখা, অনান্য শখের কবি বা নবীন কবিদের সাথে আলাপ ও সংযোগ তৈরী হওয়া, এ সব কিছুরই সুযোগ রয়েছে। কুইবেকে মে মাসব্যাপী কবিতা মাসের উদযাপন হয় মুয়া দে লা পোয়েসি উৎসবে।
উৎসব কী শুধু বিখ্যাত-প্রখ্যাত দের! উৎসব সবার! তাই নবীন লেখকদের প্রোৎসাহন দিতে ও আগ্রহীদের অবলম্বন ও সুযোগ দিতে রয়েছে হুইসলার রাইটার্স ফেস্টিভাল, প্রিন্স এডোয়ার্ড কাউন্টি রীডস অথর্স ফেস্টিভাল এর মতো বেশ কিছু অনুষ্ঠান।
সাহিত্য উৎসবকে সার্বজনিক মাত্রা দিতে যেই অনুষ্ঠানগুলির অবদান বিপুল, তাদের মধ্যে অন্যতম হলো দ্য ওয়ার্ড অন দি স্ট্রীট। এটি কানাডার বৃহত্তম বই ও পত্রিকা উৎসব। এটি শুরু হয় ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, যেই বছরটি ছিল ইন্টারন্যাশনাল লিটেরেসি ইয়ারও বটে। আয়োজকদের ইচ্ছা এবং উদ্দেশ্যও ছিল ওই বছরের বিশেষ সেই বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ – অর্থাৎ কী উপায়ে কানাডীয় সাহিত্য, সাহিত্যিক, বই, পত্রিকা জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় বা সার্বিকভাবে পড়ার আগ্রহ ও রুচি তৈরী করা যায়। এই উৎসবটির সমস্ত কর্মসূচীই এই একটি লক্ষ্যকে ঘিরে – স্থানীয় লেখক ও শিল্পীদের একটি মঞ্চ দেওয়া, ছোট মাপের প্রকাশনীদের জায়গা দেওয়া, জনসাধারণের মধ্যে সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ ও অনুরাগ তৈরী করা। অনুষ্ঠানটির জনপ্রিয়তা এখন বেশ কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়াতে কানাডার অন্যান্য শহরেও এই মেলাটি প্রসারিত হয়েছে। মার্গারেট অ্যাটউড, ভিন্সেন্ট ল্যাম, ডেভিড সুজুকি, অ্যালিস্টার ম্যাক্লিয়ড, সারা পলি, কে না যোগ দিয়েছেন এই পথ-সাহিত্য উৎসবে! ওয়ার্ডস অন দ্য স্ট্রীটের মূল বার্ষিক অনুষ্ঠানটি এপ্রিল মে নাগাদ টোরন্টো শহরের কুইন্স পার্কে হয়, এবং ফল অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে শহরের বিভিন্ন পাড়ায় ছোট ছোট পপ-আপ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়াও কিছু ব্যতিক্রমী কানাডীয় সাহিত্য উৎসবের কথা না বললেই নয় –মন্ট্রিয়ালের ইয়াং অ্যাডাল্ট বুক ফেস্টে নবীন বইপ্রেমীদের সুযোগ দেওয়া হয় তাদের পছন্দের সাহিত্যিক, শিল্পী ও সমমনস্কদের সাথে বার্তালাপ করার। থাকে সাহিত্যভিত্তিক খেলা ও বিভিন্ন কর্মসূচী। প্রতি বছর নভেম্বরে আয়োজিত কুইবেকের কুয়াহিয়াটঙ্ক উৎসবে মধ্যমনি ইন্ডেজিনাস বা আদিবাসি সাহিত্যিকরা। আপনি যদি পর্বতপ্রেমী হোন, যেতে পারেন ব্যানফ সেন্টর মাউন্টেন ফিল্ম এন্ড বুক ফেস্টিভালে। এটি অনুষ্ঠিত হয় প্রতি অক্টোবরে এবং এই অনুষ্ঠানের বিশেষত্ব হলো পাহাড় ও পর্বতারোহণ নিয়ে সাহিত্য ও শিল্পের সমাহার। শুধু বই বা পর্বতারোহী লেখকদের সাথে সাক্ষাৎকার নয়, এখানে আপনি দেখা পাবেন ফোটোগ্রাফার ও ভ্রমণ বা পর্বতপ্রেমী ব্লগারদেরও।
মঞ্চে বসে নিজের রচনা থেকে পাঠ করার মতো সোজাসাপটা সাদামাটা ব্যাপারে একটু মনোরঞ্জন ও রোমাঞ্চ সঞ্চারিত করতে অনেক সাহিত্য উৎসবে করা হয় লিটেরারি ক্যাবারের আয়োজন। অর্থাৎ শুধু বই থেকে পাঠ নয়, দর্শক-শ্রোতার সাহিত্য-অভিজ্ঞতার পশম বোনা হচ্ছে গান, আবৃত্তি, বাজনা, অভিনয়ের মিশ্র সূতো দিয়ে। পারফরমেন্সের মধ্যে দিয়ে সাহিত্যের উপস্থাপনা কিন্তু বেশ মনোগ্রাহী এবং পুরনো উপায়। এর আনন্দ নেওয়া যাবে হুইসলার রাইটার্স ফেস্টিভাল ও ক্যাম্পবেল রিভারে ওয়ার্ডস অন দ্য ওয়াটার অনুষ্ঠানে। ভ্যাঙ্ক্যুভারে নর্থ শোর রাইটার্স ফেস্টিভালে থাকে সাহিত্যভিত্তিক কুইজ।
নর্থওয়েস্ট টেরিটোরিজে নর্থ ওয়ার্ডস সাহিত্য উৎসব শুরু হয় ২০০৭ সালে ইয়ালোনাইফের স্থানীয় লেখকদের নিয়ে। উদ্দেশ্য ছিল উত্তর কানাডার আদিবাসি গোষ্ঠীর কন্ঠ মূলধারার কানাডীয় সাহিত্যের সাথে মিলন ঘটানো। অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা পায় এই অনুষ্ঠানটি এবং একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো কামিং হোমঃ স্টোরিজ ফ্রম দি এনডাবলুটি নামের উত্তর কানাডীয় লেখকদের রচনার একটি সঙ্কলন প্রকাশ। বিশিষ্ট আদিবাসি লেখকবৃন্দ যেমন ওয়াবগেশিগ রাইস, ক্যারোল রোজ গোল্ডেনঈগল, রিচার্ড ভ্যান ক্যাম্প প্রমুখ মে-জুন মাসে অনুষ্ঠিত এই সাহিত্য উৎ্সবে শুধুমাত্র বক্তা হিসেবে নয়, লেখন-শৈলীর কর্মশালায় নবীনদের শিক্ষাগুরু হিসেবে ও সর্বোপরি তাঁদের গোষ্ঠির সংস্কৃতির মুখপাত্র হয়ে যোগদান করেছেন।
টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল স্টোরিটেলিং ফেস্টিভাল আরেকটি বেশ অন্যরকমের অনুষ্ঠান। এখানে আসর জমান গল্প বলিয়েরা। বই থেকে পাঠ নয়, এই উৎসব হলো গল্প বলার, মৌখিক সংস্কৃতির প্রথা চালিয়ে যাওয়ার। গল্পদাদুর আসর কি শুধুই শিশুদের জন্য? বড়দের জন্যও সমান মনোগ্রাহী শিক্ষণীয় ও এমনকি অপনোদনকারী। পৃথিবীর বহু জাতির সংস্কৃতিতে আজও মৌখিক গল্পপাঠের পরম্পরার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে আর সপ্তাহ-ব্যাপী এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেন দেশ বিদেশের বাচিক শিল্পীরা। এই বছর, অর্থাৎ ২০২৪, এই অনুষ্ঠানের ৪৫তম বছর।
বইপাঠ ও লেখালিখি যুগপৎ মানুষকে উন্নতমনস্ক করে তোলে। বৈচিত্র্যভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ব্যাবস্থা স্থাপন করতে ও প্রসার করতে সাহায্য করে। বলাই বাহুল্য সুশৃঙ্খল ও সুস্থ সমাজ গঠনে সাহিত্য উৎসবের অবদান অসীম ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।