কানাডায় মানবাধিকার: চ্যালেঞ্জ এবং উত্তরণ

শাহানা আকতার মহুয়া

দুই যুগ আগেও কানাডা নামক দেশটি নিয়ে মানুষের মধ্যে তেমন আগ্রহ ছিল না যেমনটা ছিল আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য কিংবা লন্ডনের প্রতি। কিন্তু এখন সেটা বদলে গেছে অনেকটাই – বর্তমান সময়ে স্থায়ী অভিবাসন, উচ্চতর শিক্ষা, ভ্রমণ কিংবা চাকুরি – সব ক্ষেত্রেই মানুষের অন্যতম পছন্দের দেশটি হচ্ছে কানাডা।

নানা কারণে কানাডায় আসার জন্য মানুষের আগ্রহের ইতিহাস দীর্ঘ। এবং বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন কারণে সেই আগ্রহের মাত্রা নানাভাবে প্রভাবিত হয়েছে। আগ্রহের শুরুটা কয়েকটি মূল সময়সীমার ওপর ভিত্তি করে বোঝা যেতে পারে:

উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে শেষার্ধে

  1. আবাসন ও কৃষি সুযোগ: ১৮০০ সালের মাঝামাঝি থেকে কানাডার সরকার কৃষি জমি উন্নয়নের জন্য ইউরোপীয় অভিবাসীদের উৎসাহিত করতে শুরু করে। এ সময়ে প্রচুর ইউরোপীয়, বিশেষ করে ব্রিটিশ ও আইরিশ অভিবাসীরা কানাডায় আসেন।

বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়

  1. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর: যুদ্ধের পর ইউরোপের ধ্বংসস্তূপ থেকে পালিয়ে এসে নিরাপদ আশ্রয় খোঁজার জন্য অনেক মানুষ কানাডায় অভিবাসন করেন। এছাড়া কানাডা তাদের অর্থনীতি পুনর্গঠনের জন্য এবং শ্রমিক সংকট মোকাবেলা করার জন্য অভিবাসীদের স্বাগত জানায়।

বিংশ শতকের শেষভাগ থেকে বর্তমান পর্যন্ত

  1. বহুসংস্কৃতির ধারণা ও উন্নত জীবনযাত্রা: ১৯৭০ ও ১৯৮০ এর দশক থেকে কানাডার অভিবাসন নীতি বহুসংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, যা বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে কানাডায় আসার আগ্রহ সৃষ্টি করে। উন্নত জীবনযাত্রা, শিক্ষার সুযোগ, এবং সামাজিক নিরাপত্তা কানাডার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়িয়ে তুলেছে।

বর্তমান যুগ

  1. আধুনিক শিক্ষা, চিকিৎসা ও প্রযুক্তিগত সুযোগ: আধুনিক যুগে কানাডার উন্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সার্বজনীন চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধা বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থী এবং পেশাজীবীদের আকৃষ্ট করছে।

কানাডার প্রতি মানুষের আগ্রহের মূল কারণগুলো হল উন্নত ও শান্তিপূর্ণ জীবনযাত্রা, শিক্ষা ও গবেষণা, কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক সুযোগ, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, পরিবার পুনর্মিলন, উদার অভিবাসন নীতি। এসব কারণেই কানাডা বিভিন্ন সময়ে এবং বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে মানুষের কাছে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে।

কানাডা মানবাধিকারের দেশ। সারা বিশ্বে মানবিক দেশ হিসেবে কানাডার পরিচিতি রয়েছে। মানবাধিকারটা আসলে কী? মানবাধিকার হচ্ছে সকল মানুষের অধিকার। এ অধিকার কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী, মতবাদ, ধর্ম, শ্রেণী বা দেশের অধিকার নয়। সকল মানুষ অভিন্ন নয়, বরং প্রত্যেক মানুষই স্বতন্ত্র, কিন্তু জীবনের বৃহৎ এলাকায় সকল মানুষ অভিন্ন, এক। শুধু নিজ দেশেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় সেখানেও কানাডা সোচ্চার কন্ঠে প্রতিবাদ করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে। কানাডা সম্পর্কে এটাই সর্বসাধারণের ধারণা।

হ্যাঁ, কানাডায় মানবাধিকার আছে। কানাডা একটি গণতান্ত্রিক দেশ যেখানে মানবাধিকার সুরক্ষিত এবং সংরক্ষিত। এই অধিকারগুলি প্রধানত কানাডার সংবিধানে এবং “Canadian Charter of Rights and Freedoms” এ নির্ধারিত হয়েছে। এই চার্টারটি কানাডার সংবিধানের অংশ এবং এটি নিশ্চিত করে যে সব নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দাদের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষা করা হবে।

কানাডা বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ হিসেবে পরিচিত। কানাডায় মানবাধিকার রক্ষা এবং উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন আইন, নীতি এবং প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো –

১. কানাডিয়ান চার্টার অফ রাইটস অ্যান্ড ফ্রিডমস: কানাডিয়ান চার্টার অফ রাইটস অ্যান্ড ফ্রিডমস (Canadian Charter of Rights and Freedoms) ১৯৮২ সালে প্রবর্তিত হয়। এটি মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীনতার গ্যারান্টি দেয়।

২. কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস অ্যাক্ট: কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস অ্যাক্ট (Canadian Human Rights Act) ১৯৭৭ সালে প্রণয়ন করা হয়। এই আইনটি বৈষম্য নিষিদ্ধ করে এবং চাকরি, বাসস্থান এবং সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমান অধিকার দেয়।

৩. মানবাধিকার কমিশন এবং ট্রাইব্যুনাল: কানাডায় জাতীয় এবং প্রাদেশিক পর্যায়ে মানবাধিকার কমিশন এবং ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। এগুলি বৈষম্যের অভিযোগ নিয়ে কাজ করে এবং সমাধান প্রদান করে।

৪. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার: কানাডা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি অধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য মৌলিক সেবার ক্ষেত্রে উন্নয়নের প্রচেষ্টা চলছে।

৫. আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি: কানাডা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ। যেমন, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন চুক্তি, শরণার্থী সুরক্ষা চুক্তি ইত্যাদি।

৬. অভিবাসন এবং শরণার্থী অধিকার: কানাডা অভিবাসন এবং শরণার্থী অধিকারের ক্ষেত্রে উদার। দেশটি শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের মানবাধিকার রক্ষায় অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছে। কানাডা বহু শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে এবং শরণার্থীদের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে।

৭. বৈষম্যবিরোধী আইন: কানাডায় বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যবিরোধী আইন রয়েছে যা লিঙ্গ, বর্ণ, ধর্ম, যৌন অভিমুখিতা ইত্যাদির ভিত্তিতে বৈষম্য প্রতিরোধ করে।

লিঙ্গ সমতা এবং নারীর অধিকার রক্ষায় কানাডা অনেক অগ্রগামী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নারীদের কর্মক্ষেত্রে সমান সুযোগ প্রদান এবং নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে প্রচুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০০৫ সাল থেকে কানাডায় সমলিঙ্গ বিবাহ বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং এলজিবিটিকিউ+ ব্যক্তিদের প্রতি বৈষম্য রোধে কঠোর আইন প্রয়োগ করা হয়েছে।

এই বিষয়গুলো নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে, কানাডা একটি মানবাধিকারবান্ধব দেশ এবং মানবাধিকারের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি অটল। তারপরেও কথা থেকে যায়। মানবাধিকার সমর্থনকারী দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও, মানবাধিকার লঙ্ঘনের কিছু ঘটনাও এ দেশে ঘটেছে বিভিন্ন সময়ে। এই ঘটনাগুলোতে দেখা যায়, কানাডা মানবাধিকার রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিলেও, বাস্তবে কিছু ক্ষেত্রে তা লঙ্ঘিত হয়।

প্রথমেই বলতে হয় আদিবাসী জনগোষ্ঠী  কথা। কানাডার আদিবাসী জনগোষ্ঠী এখনো বৈষম্যের শিকার হয়। তাদের ভূমি অধিকার, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা এবং সামাজিক সেবা ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। প্রায়শই এই জনগোষ্ঠীর উপর পর্যাপ্ত মনোযোগ দেওয়া হয় না এবং তাদের সংস্কৃতি ও পরিচিতি রক্ষার ক্ষেত্রে অবহেলা করা হয়। আদিবাসী নারীদের নিখোঁজ হওয়া ও হত্যাকাণ্ডের সংখ্যাও কম নয়। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুসারে, ১৯৮০ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে প্রায় ১২০০ আদিবাসী নারী নিখোঁজ বা হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে।

–      আবাসন সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে বিশেষ করে বড় শহরগুলিতে, আবাসনের মূল্য অনেক বেড়েছে যা অনেক নিম্ন আয়ের মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ফলে অনেকেই গৃহহীন হয়ে পড়ছেন এবং পর্যাপ্ত বাসস্থানের অভাবের কারণে তারা মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

–      কানাডার বিভিন্ন অংশে পুলিশি নির্যাতন এবং জাতিগত বৈষম্য নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গ এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতি এই বৈষম্য বেশি লক্ষ্য করা যায়।

–      শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের সাথে অনেক সময় বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। আশ্রয়প্রার্থীদের আটক করা এবং তাদের দীর্ঘদিন ধরে আটকে রাখা নিয়ে বিতর্ক আছে। অনেক সময় তারা পর্যাপ্ত সেবা এবং ন্যায্য বিচার থেকে বঞ্চিত হন।

–      কারাগারের পরিবেশ এবং শর্ত অনেক ক্ষেত্রেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল হয়। কারাগারে থাকা মানুষদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা এবং অন্যান্য সহায়তার ঘাটতি রয়েছে।

–      পারিবারিক সহিংসতা এবং মানব পাচারের ক্ষেত্রে নারীরা এবং শিশুরা অনেক সময় যথাযথ সুরক্ষা পান না।

কানাডায় অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে দু’একটি কথা না বললেই নয়। এদেশের অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি, এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে অভিবাসীদের বিশাল ভূমিকা অনস্বীকার্য, অভিবাসীরা কানাডার শ্রমবাজারে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এসে তারা নতুন নতুন ব্যবসা শুরু করে, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে এবং অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনে। নিজ দেশ থেকে এ দেশে আসার সময় অভিবাসীরা সাথে নিয়ে আসেন দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা, যা কানাডার বিভিন্ন শিল্পখাতকে উন্নত করতে সহায়তা করে। আবার অনেক অভিবাসী গবেষণা, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে বিশেষজ্ঞ। তাদের জ্ঞান এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতা কানাডার বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি খাতকে সমৃদ্ধ করে। এদেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ বার্ধক্যজনিত কারণে কর্মক্ষমতা হারাচ্ছে, কিন্তু অভিবাসীরা জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে এবং কর্মশক্তির পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাই বলা যায়, কানাডার জনসংখ্যা বৃদ্ধি অনেকাংশেই অভিবাসীদের উপর নির্ভরশীল। শুধু তা-ই নয়,  বিভিন্ন দেশ থেকে অভিবাসীরা আসায় ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি, ভাষা, এবং ঐতিহ্যের সমাহার ঘটেছে। এই বৈচিত্র্য কানাডার সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধিতে অবদান রাখছে, সমাজে একটি বহুজাতিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।

যেহেতু দেশটির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভিবাসীরা নানামুখী অবদান রাখছে, তাই তাদের অধিকার এবং সেসব অধিকার রক্ষায় দেশটির ভূমিকা কতখানি- তা জানার জন্য কৌতুহল থাকাটাই স্বাভাবিক। এ প্রসঙ্গে এক কথায় বলা যায়, কানাডায় অভিবাসীদের অধিকার অত্যন্ত বিস্তৃত এবং সুরক্ষিত।

কানাডার চার্টার অনুযায়ী অভিবাসীরা সকল মৌলিক অধিকার উপভোগ করেন, যা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। সকলেই সমানভাবে আইন এবং বিচারব্যবস্থা দ্বারা সুরক্ষিত। তাদের আদালতে বিচার প্রক্রিয়ার সময় সমান অধিকার এবং সুষ্ঠু বিচার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা থাকে।

অভিবাসীদের জন্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তার অধিকার আছে, যা নিশ্চিত করে যে তারা নির্যাতন বা অমানবিক আচরণের শিকার হবে না। স্থায়ী অভিবাসীরা প্রদেশ বা টেরিটোরির স্বাস্থ্যসেবা প্রোগ্রামের অধীনে সমানভাবে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা পায়।

অভিবাসী শিশুরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য সরকারি স্কুলে বিনামূল্যে শিক্ষা পেতে পারে।

অভিবাসীরা সাধারণত কানাডার যেকোনো প্রদেশে বসবাস করতে পারেন এবং তাদের জীবন যাপন, কাজ বা ব্যবসার জন্য স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে তারা সম্পূর্ণ স্বাধীন।

অভিবাসীরা দেশটিতে বৈধভাবে কাজ করার অধিকার পেয়ে থাকে এবং কর্মক্ষেত্রে তাদের সাথে সমান আচরণ করা হয়। কানাডার শ্রম আইন অনুসারে, অভিবাসী কর্মীরা নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশ, ন্যায্য মজুরি এবং কাজের সময় সীমার অধিকার পায়।

স্থায়ী অভিবাসীরা নির্দিষ্ট সময় পরে কানাডিয়ান নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন, যা তাদের আরও অধিকতর অধিকার এবং সুবিধা প্রদান করে। অভিবাসীরা তাদের পরিবারকে কানাডায় নিয়ে আসার জন্য স্পনসর করতে পারেন।

কানাডায় জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, বা বয়সের ভিত্তিতে বৈষম্যের বিরুদ্ধে কঠোর আইন রয়েছে, যা অভিবাসীদের সমান সুযোগ এবং অধিকার নিশ্চিত করে। অভিবাসীদের এই অধিকারগুলি তাদের নিরাপত্তা, স্বাচ্ছন্দ্য এবং উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাইতো কানাডা একটি বহুসাংস্কৃতিক দেশ হিসেবে পরিচিত, যেখানে বিভিন্ন সংস্কৃতি, ধর্ম, ও পটভূমির মানুষ সমানভাবে বসবাস ও কাজ করতে পারে।

কানাডা একটি উন্নত এবং মানবাধিকার সচেতন দেশ হলেও, বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে এবং সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করা সম্ভব।

বিশের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে কানাডা মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে বেশি ভূমিকা রাখছে। যে যে ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ আছে, সেখানে আছে উত্তরণেরও উপায়। সহজ কথায় বলা যেতে পারে, এ দেশের উন্নতমানের মানবাধিকার রক্ষার প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও আদিবাসী জনগণ, সংখ্যালঘু এবং নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য আরও অনেক কিছু করার প্রয়োজন। মানবাধিকার রক্ষায় কানাডার অগ্রগতি ও সীমাবদ্ধতা উভয়ই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। মানবাধিকারের ওপর বিদ্যমান আইন ও নীতিগুলো নিয়মিত পর্যালোচনা এবং হালনাগাদ করা, স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবাধিকার বিষয়ক কোর্স চালু করা, অভিবাসী-শরণার্থী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার সংরক্ষণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া, মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা এবং এর ওপর ভিত্তি করে সুপারিশমালা প্রণয়ন করা, বৈচিত্র্যময় সমাজের মূল্যায়ন এবং সমতা সুনিশ্চিত করার জন্য আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে কানাডায় মানবাধিকারের সুফলগুলো আরও ভালোভাবে, বিস্তৃতভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে।