কানাডায় নারী অধিকার

প্রতিমা সরকার

‘নারী’ কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন,বিশ্বে যা কিছু মহান চির কল্যাণকর,অর্ধেক তার করিয়াছে নারী,অর্ধেক তার নর। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দেখা যায় নারীর ইতিহাস বঞ্চনা,বৈষম্যের ইতিহাস। যুগ,যুগ ধরে নারীর শ্রম, নারীর অবদানকে খুব কমই স্বীকার করা হয়েছে। আর তাই সমাজে, রাস্ট্রে নারীর অবস্থানকে ধরে রাখার জন্য নারীকে পাড়ি দিতে হয়েছে অনেক লম্বা পথ। করতে হয়েছে অনেক সংগ্রাম।

নারীর অধিকার বলতে আমরা আসলে কী বুঝি? নারীর অধিকার হচ্ছে তার মৌলিক মানবাধিকার, যা মূলত সহজাত, সর্বজনীন, অবিচ্ছেদ্য এবং অলংঘনীয়। যা ৭০ বছর আগে জাতিসঙ্ঘ  সনদেও সংরক্ষণ করা হয়েছে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের জন্য। এই অধিকারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে বৈষম্যহীন, দাসত্ব ও সহিংসতামুক্ত জীবন যাপন। শিক্ষা পাবার ও নিজস্ব সম্পত্তির অধিকার, ভোট দানের অধিকার এবং কর্মক্ষেত্রে সমান ও স্বচ্ছ আয়ের অধিকার।

কানাডাকে বলা হয় নারী বান্ধব দেশ। নারীর অধিকার রক্ষায় নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্কের পরেই আসে কানাডার নাম। কানাডার ইতিহাস গড়ে উঠেছে অগনিত উদ্যমী নারীর সমন্বয়ে, যারা কাজ করেছে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করে নারীর অগ্রযাতাকে অব্যাহত রাখতে। এই সকল নারী অসামান্য অবদান রেখেছে কিছু গুরুত্বপুর্ণ মানব অধিকার রক্ষায় যা আজ কানাডার মৌলিক মুল্যবোধের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে  অন্যতম হচ্ছে – ফেডারেল এবং প্রভিনশিয়াল ইলেকশনে ভোট প্রদানের অধিকার, নিজস্ব সম্পত্তির অধিকার, নুন্যতম আয়ের অধিকার এবং সর্বশেষ আইনের চোখে মানুষ হিসেবে পরিচয় পাবার অধিকার। যদিও এই অধিকার গুলো আদায়ে কানাডিয়ান নারীকে পাড়ি দিতে হয়েছে সুদীর্ঘ পথ।

কানাডার সংবিধানেও  নারী অধিকারকে প্রাধান্য দিয়ে কিছু গুরুত্বপুর্ণ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।  তার মধ্যে Canadian Charter of Rights and Freedoms প্রতিটি নারীকে সুরক্ষিত করেছে যে কোন প্রকারের লিঙ্গ বৈষম্য,বয়স এবং বৈবাহিক অবস্থা সহ আরো অনেক বিষয়ে।উল্লেখ্য যে Canadian Charter of Rights and Freedoms’এর দুইটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হচ্ছে  Section 15 & Section 28। সেকশন ১৫ জাতি,জাতীয়তা,নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠী ,বর্ণ ধর্ম,লিঙ্গ,বয়স এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে অক্ষমদের আইনের  সব ধরনের সমতামূলক সুবিধা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করে। পরবর্তিকালে আদালতের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে এই লিস্ট বাড়িয়ে নাগরিকত্ব,বৈবাহিক অবস্থা,যৌন আচরণগত অভিব্যক্তি ও সিদ্ধান্তকেও চিহ্নিত করা হয়।

অন্যদিকে সেকশন ১৮ নিশ্চিত করে যে এই আইন এবং সিদ্ধান্ত সমানভাবে নারী এবং পুরুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

১৯৭৭ সালে প্রণীত Canadian Human Rights Acts বলে লিঙ্গ ,যৌন অভিব্যক্তি,বৈবাহিক অবস্থা ও পারিবারিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে প্রতিটা কেনেডিয়ান নাগরিকের সমতা,সমান সুযোগ,সুচিকিৎসা,এবং বৈষম্যহীন পরিবেশে থাকার অধিকার আছে।

 নারীর সম্পত্তির অধিকার –

কানাডায় নারী অধিকার সুরক্ষার প্রথম পদক্ষেপ ছিল বিবাহিত নারীর সম্পত্তির উপর অধিকারকে বৈধকরণের।

১৮৮৪  সালে অন্টারিওতে এবং ১৯০০ সালে মেনিটোবা প্রদেশে বিবাহিত নারীর সম্পত্তি আইন পুরুষের মতই নারীকেও দেয় সমান বৈধ অধিকার এবং নারী সক্ষম হয় সম্পত্তি কেনা ও বৈধ চুক্তি করার। এর আগে  মেনিটোবায় বসবাসকারী কোন নারী যদি বিয়ে করতো,তাহলে সে তার সকল সম্পত্তির উপর অধিকার হারাতো। আইনগতভাবে সেগুলো পেতো তার স্বামী।

পরবর্তীকালে ধীরে হলেও কুইবেক সহ বাকি প্রভিন্স আর টেরিটরিগুলোও ১৯৬৪ সালে বিবাহিতা নারীর সম্পত্তির অধিকার আইনে সাক্ষর করে। বিশেষ করে সিভিল কোড অফ কুইবেক বিবাহিত নারীকে দেয় পূর্ণ বৈধ সম্পত্তির অধিকার।

নারীর ভোটের অধিকার –

শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি যে, বিংশ শতাব্দীর শুরুতে কানাডিয়ান ফেডারেল এবং প্রভিন্সিয়াল ইলেকশনে নারীর ভোটাধিকারকে অস্বীকার করা হতো। ১৮৬৭ সালে কানাডিয়ান কনফেডারেশন গঠিত হওয়ার পরে সকল প্রভিন্সে তিনটি কন্ডিশন ছিল একজন ভোটার হতে হলে। সেগুলো হলো, পুরুষ হতে হবে ,বয়স ২১ হতে হবে এবং ব্রিটিশ নাগরিক হতে হবে জন্মগত বা প্রকৃতিগতভাবে।

মেনিটোবা থেকে শুরু –

১৯১৪ সালে ভোটাধিকার কর্মী ও সুপরিচিত লেখক  Nellie McClung এর নেতৃত্বে Political Equality League of Manitoba নামে একটি সংগঠনের বেশ কিছু সদস্য এবং আরো কিছু সংখ্যক নারী,পুরুষ মিলে মেনিটোবা পার্লামেন্টের অধিবেশনের প্রাক্কালে নারীর ভোটাধিকার বিষয়ে কাজ শুরু করে। ১৯১৫ সালে নারীর ভোটাধিকারের স্বপক্ষে ৪০,০০০ সাক্ষরসহ একটি পিটিশন দেয়া হয়। অবশেষে ১৯১৬ সালে গভর্নর জেনারেল মেনিটোবার নারীরা ভোট দিতে পারবে বলে এক আইন পাশ করেন এবং নারীরা প্রভিন্সিয়াল ইলেকশনে  ক্যান্ডিডেট হতে পারবে বলেও ঘোষণা দেন। সাসকাচোয়ান ও আলবার্টা প্রদেশেও একই সময়ে নারীর ভোটাধিকার দেয়। ব্রিটিশ কলম্বিয়া ও অন্টারিয় প্রদেশে নারী ভোটাধিকার পায় ১৯১৭ সালে।

একই বছর,  কানাডা ওয়ার টাইম ইলেকশন এক্ট নামে একটি আইন পাশ করে। যার ফলে সামরিক বাহিনীতে কর্মরত নারীগণ এবং যাদের পুরুষ আত্মীয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে গেছে তারাও ভোটাধিকার পায়। ১৯১৮ সালের মধ্যে ২১ বছরের এবং তার ঊর্ধ বয়সী সকল ককেশিয়ান নারী ফেডারেল ইলেকশনে ভোট দেয়ার অধিকার পায়। শুধুমাত্র আদিবাসী ও কিছু মাইনরিটি গ্রুপ ছাড়া।

কুইবেক হচ্ছে সর্বশেষ প্রভিন্স যেখানে ১৯৪০ সালে নারীরা প্রভিন্সিয়াল ইলেকশনে ভোট দেয়ার অধিকার পায়। ক্রমে ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু হয়ে ১৯৬০ সালের মধ্যে আদিবাসী নারী,পুরুষ সহ মাইনরিটি গ্রুপগুলোও ভোটের অধিকার পায়।

নারী অধিকারের ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হচ্ছে ১৮৬৭ সালের বৃটিশ নর্থ আমেরিকা আইনের অধীনে নারীর ‘ব্যক্তি’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত হওয়া।১৯২৮ সালে ফেমাস ফাইভ নামে খ্যাত পাচ জন নারী যথাক্রমে Henrietta Muir Edwords,Nellie McClung,Louise Mckinney,Emily Murphy এবং Irene  Parlby কানাডিয় সরকারের কাছে পিটিশন দেয় যাতে কানাদার সুপ্রীম কোর্ট সিদ্ধান্ত নেয় ‘ব্যক্তি’ হিসেবে নারীকে সংজ্ঞায়িত করা হবে কিনা!তবে সুপ্রীম কোর্ট নেতিবাচক সিদ্ধান্ত দিলে ১৯২৯ সালে তারা Judicial Committee of Privy Council in England (JCPC) এর কাছে আপীল করে।এই আপীলের প্রক্ষিতে সুপ্রীম কোর্ট নারীকে  আইনের অধীনে ‘ব্যক্তি’ হিসেবে বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত দেয়। ।যার ফলশ্রুতিতে,নারীরা কানাডিয়ান সিনেটের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে এবং পরের বছরই, অর্থাৎ ১৯৩০ সালে মন্ট্রিয়েল এর  Cairine Reay Wilson প্রথন নারী ,যিনি সিনেটে নিযুক্ত হন।তিনি ছিলেন ১৯৪৯ সালে জাতিসংঘের সাধারন পরিষদে কানাডার প্রথম নারী প্রতিনিধিও।

কানাডার নারী অধিকারের আরেকটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হলো, কর্মক্ষেত্রে নারী,পুরুষের সমতা রক্ষায় ১৯৫১ সালে অন্টারিও প্রদেশে Fair Employment Practices Act and the Female Employees Fair   Remuneration Act নামে দুটি আইন পাশ হয়।প্রথম আইনটিতে সকল বৈষম্য দূর করার জন্য জরিমানা ও অভিযোগ করার ব্যবস্থা রাখা হয় এবং দ্বিতীয় আইনটি করা হয় নারী ও পুরুষের সম মজুরী নিশ্চিত করার জন্য। কানাডার অন্যান্য প্রভিন্স ও টেরিটরি গুলোও দ্রুত ওন্টারির এই আইন দুটিকে ফলো করে একই আইন তৈরি করে কর্মক্ষেত্রে সমতা নিশ্চিত করার জন্য।

নারীর সম অধিকার,ভোটের অধিকার এবং কর্মক্ষেত্রে সম মজুরির অধিকার ছাড়াও কানাডায় বিভিন্ন সময়ে আরো কিছু আইন পাশ করা হয় এবং আরও কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয় যার মধ্য দিয়ে আজ অব্দি কানাডীয় নারী্রা নিরাপদে, নিশ্চিন্তে জীবন যাপন করতে পারছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো –

১। ১৯২১ সালে বৃটিশ কলম্বিয়া একটি আইন পাশ করে যেখানে নারীকে ছয় সপ্তাহের মাতৃত্বকালীন ছুটি দেয়া হয় সন্তান জন্মের আগে এবং পরে। ১৯৬৪ সালের আগ পর্যন্ত যা অন্য কোন প্রভিন্স বা টেরিটরিতে জারী হয়নি।

২। ১৯২৮ সালে প্রথমবারের মত কানাডার অলিম্পিক টিমে নারীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

৩। ১৯৮৩ সালে Bill-C-127 নামে একটি আইন পাশ হয় হাউস অফ কমন্সে এবং ক্রিমিনাল কোড এ সংশোধনী আনা হয় যৌন অপরাধ এবং অন্যান্য অপরাধের বিষয়ে। যাতে ‘ধর্ষন’ শব্দটি বিলুপ্ত করে ‘যৌন নিপীড়ন মুলক অপরাধ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। এই নতুন আইনটির উদ্দেশ্য ছিল যৌন নিপীড়ণের শিকার হলে পরে যেন ভিকটিমের পক্ষে অভিযোগ করা সহজ হয় এবং আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার সময় যেন কোন অস্বস্তিকর অবস্থা সৃস্টি না হয়।

৪। ২০০৫ সালে সেইম সেক্স ম্যারিজ লিগাল হয় ।

৫। কিম ক্যাম্পবেল কানাডার প্রথম নারী প্রথানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন ।  

৬। Plan International নামের বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবসের জন্য  ‘কারন আমি একটি মেয়ে’ (Because I Am A Girl) নাম দিয়ে বিশ্বব্যাপি সামাজিক আন্দোলনের  প্রচারণা চালানো হয়। পরে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় কানাডার পার্লামেন্টের সাবেক সদস্য Roan Ambrose এর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস উদযাপনের প্রস্তাব আনা হয় এবং ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর তারিখে প্রথম আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালন করা হয়।

৭। ২০১৫ সালে একটি সর্বজনীন কানাডীয় তদন্ত ব্যবস্থা চালু করা হয় নিখোঁজ এবং নিহত Indigenous  নারী ও মেয়েদের ইস্যুতে। এই তদন্তের ফাইনাল রিপোর্ট ও আনুসংগিক সুপারিশ প্রকাশ করা হয় ১৯১৯ সালে।

৮। ২০১৭ সালে Canadian Human Rights Act  এ Gender Expression ও Gender Identity অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

৯। ২০২২ সালে কানাডিয়ান সরকার লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা রোধে ১০ সাল ভিত্তিক একটি জাতীয় Action Plan এর অনুমোদন  ঘোষণা করে যা কানাডীয় ইতিহাসে একটি মাইলফলক।

কানাডায় নারীর অবস্থান বিষয়ে Royal Commission Report –-

ষাটের দশক ছিল অনেক পশ্চিমা দেশের মতো কানাডায়ও নাটকীয় পরিবর্তন ও উত্থানের সময়কাল। যখন নাগরিক অধিকার ও শান্তি আন্দোলনের মতো কার্যকলাপ গতিপ্রাপ্ত হয় তখন নারী আন্দোলনেও তার ঢেউ লাগে এবং নারীর জন্য সমতা আন্দোলন এগিয়ে নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে দেখা যায় যে, ক্রমবর্ধমান হারে নারীরা তাদের ঐতিহ্যগত ভূমিকা থেকে বের হয়ে এসে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করছে, বেতনভুক্ত চাকরি করছে। অন্যদিকে কেউ কেউ তাদের গৃহস্থালি কাজের স্বীকৃতি দাবী করছে এবং নারী পুরুষ ভেদে দায়িত্বের সমবন্টনের কথা বলছে।

১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে কানাডার আইনসভায় যুগান্তকারী Report of The Royal Commission on the Status of Women in Canada উপস্থাপন করা হয়। আইনী ব্যবস্থার আধুনিকীকরণে এবং নারীর জন্য গুরুত্বপুর্ণ ইস্যু হিসেবে চিহৃত করে ৮টি ক্যাটাগরীতে ভাগ করে ১৬৭টি সুপারিশ করা হয় । যেগুলো হচ্ছে –

১। অর্থনীতিতে নারী

২। শিক্ষা ক্ষেত্রে নারী

৩। পরিবারে নারীর অবস্থান

৪। করারোপ ও চাইল্ড কেয়ার এলাউন্স

৫। দারিদ্র্য

৬। নাগরিক জীবনে নারীর অংশগ্রহণ

৭। ইমিগ্রেশন ও নাগরিকত্ব

৮। ফৌজদারী আইন ও নারী অপরাধী

এককথায়, এই সুপারিশগুলোর মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ,সর্ব জনীন চাইল্ডকেয়ার, বেতন বৈষম্য দুর করে নারীর স্বায়ত্বশাসন বৃদ্ধি, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ক্ষমতায় নারীর পদমর্যাদা আনা এবং একটি শক্ত প্লাটফর্ম তৈরি করা যার উপর ভিত্তি করে নারীরা কানাডিয় সমাজ ব্যবস্থায় পুরুষের সমকক্ষ অবস্থান অর্জন করতে পারে।

Royal Commission Report বাস্তবায়নের মূল চালিকা শক্তি—

কানাডায় জেন্ডার সমতার জন্য দীর্ঘ, কস্টার্জিত যুদ্ধের ফল ছিল নারীর অবস্থান তৈরিতে রয়েল কমিশনের সৃষ্টি।যা ছিল কিছু সংঘবদ্ধ, দৃঢ় সংকল্প নারীর সম্মিলিত প্রচেষ্টা। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তিনজন নারীর ঐতিহাসিক অবদানের কথা না বললেই নয়, যারা না থাকলে এই রিপোর্ট বাস্তবায়ন ছিল অসম্ভব। 

প্রথমেই বলতে হয় Judy LaMarsh এর কথা। যিনি ছিলেন দ্বিতীয় নারী, যে কিনা কানাডার ফেডারেল মিনিস্টার হিসেবে কাজ করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ১৯৬৭ সালে লা মার্শ প্রধানমন্ত্রী Lester B. Pearson এর কাছে আবেদন করেন যেন তিনি একটি নাগরিক তদন্তের উদ্যোগ নেন কানাডীয় সমাজে নারীর অবস্থান সম্পর্কে। যদিও তার এই আবেদনকে গ্রহন করা হয়নি। তারপরও  তার অধ্যবসায় এবং কিছু নারী সংগঠন ও আন্দোলনকারী কর্মীদের সমর্থনে Royal commission on the Status of women প্রতিষ্ঠিত হয়। মন্ত্রীর দায়িত্ব শেষে তিনি আবার তার ল’ প্র্যাক্টিস শুরু করেন এবং মানবাধিকার সংক্রান্ত কেসগুলো নিতে থাকেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, Brunswick Four নামে খ্যাত, প্রসিদ্ধ ১৯৭৪ সালের LGBT অধিকার কেইস। ১৯৭৯ সালে তিনি The Order of  Canada পুরস্কারে ভুষিত হন।

Laura Sabia ছিলেন একজন নারীবাদী সমাজকর্মী যার সমর্থনমূলক প্রচার কাজ Royal Commission on the Status of Women in Canada গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যে সময়ে নারীর সমতাভিত্তিক আন্দোলন সারা বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করতে শুরু করেছে ,নারীর অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন দানা বাঁধতে শুরু করেছে,সেই সময়ে Sabia, The Canadian Federation of University Women এর সভাপতি হিসেবে ৩২টি নারী সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত জোটের নেতৃত্ব দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছেন। তার এই অভুতপূর্ব কাজ কানাডিয়ান নারীর অধিকার আদায়ে নারী সংগঠনগুলোকে একত্রে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে।

Monique Be`gin হচ্ছেন একজন শিক্ষাবিদ ও সাবেক রাজনীতিবিদ, যিনি ছিলেন Royal Commission এর কার্যনির্বাহী সম্পাদক।কমিশনের রিপোর্ট তৈরিতে তিনি মূল ভুমিকা পালন করেন । ১৯৭২ সালে তিনি ছিলেন প্রথম কুইবেক নারী যিনি হাউজ অফ কমন্সে নির্বাচিত হোন। তার কেরিয়ার জীবনে, তিনি National Revenue and National Health and Welfare এর মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পরিচিত ১৯৮৪ সালে Canada Health Act পাশ করানোর ক্ষেত্রে তার অবদানের জন্য,যা কানাডিয়ান হেলথ কেয়ার সিস্টেমকে মজবুত করতে গুরুত্বপূর্ণ  ভূমিকা পালন করেছে।

বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে  রয়েল কমিশন রিপোর্ট কানাডার লিঙ্গ সমতার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির পথ প্রশস্ত করেছে।কানাডার জেন্ডার সমতার ক্ষেত্রে যে সমস্ত বাঁধা গুলো রয়েছে সেগুলো চিহৃত করার জন্য অনুপ্রেরণামূলক কর্মসূচি হিসেবে এই রিপোর্টের ভুমিকা অপরিসীম।

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট