কানাডায় নতুন জীবন

সৈয়দা রোখসানা বেগম

কোনো মানুষ যখন যে কোনও বিষয়ে তার মনস্থির করে ফেলে তখন কিন্তু তার বাইরে চিন্তা করা থেকে দূরে সরে যায়। এটা যে কোনও ক্ষেত্রেই হতে পারে – সম্পর্কের ক্ষেত্রেই বলুন বা প্রফেশনাল ক্ষেত্রেই বলুন। আপনার আত্মবিশ্বাস যখন খর্ব হয় তখন জীবনের অনেক কিছুই হারিয়ে যায়। আমি মনস্তাত্বিকও নই বা কোনও আইনজীবীও নই। শুধু নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু শেয়ার করার প্রয়াশ মাত্র। এটা বলার কারণ একটা বয়সে সবার মনই একটু দোদুল্যমান হয়ে থাকে। অনিশ্চয়তায় ভোগে।

কানাডা অত্যন্ত সুন্দর একটি দেশ, সভ্য একটি দেশ। পৃথিবীর প্রথম দশটি দেশের মধ্যে বসবাসযোগ্য একটি দেশ। Quality of life অনেক দেশ থেকেই এগিয়ে আছে। নিজের দেশে থাকাকালিন সময় কানাডা আমেরিকাকে স্বপ্নের দেশ মনে করে বিদেশে সবাই পাড়ি জমাতে চান। শুধু মিডিয়া টেকনোলজির মাধ্যমে যা দেখছি তাই ভেবেই পাড়ি জমাচ্ছেন অনেকেই। বিদেশে যাবই, যেতেই হবে – এই মনস্থিরটার কথাই আমি বলতে চাচ্ছি। অমুকের ছেলে বিদেশে থাকে! কত কিছু করছে! রাতারাতি বাড়িটি পালটে গেল! একটি ছেলে ইউনিভার্সিটি পাশ দিয়ে ভালো একটি র‍্যাঙ্কে চাকরি করছে – সেটাও এগুলোর কাছে তখন নগণ্য হয়ে পরে।  কিন্তু বাস্তবতাটা বড়ই কঠিন। বিশেষ করে আমাদের দেশীয় মানুষদের ক্ষেত্রে।

কারণটা একটু বলি , আমাদের দেশে বাচ্চাদেরকে লেখাপড়া শেষ না করা পর্যন্ত কোনও কাজ করানো হয় না এবং নিজের কাজটুকুও নিজেকে করে নিতে শেখানো হয় না। এটাকে রীতিমতো একটা অন্যায় বলে গন্য করা হয়। মজার ব্যাপার আমাদের দেশেই গরীব ঘরের বাচ্চারা যখন child labour দেয় সেটা নিয়ে কিন্তু কারও মাথা ব্যথা নেই।

 প্রফেশনাল ক্ষেত্রে অনেক দেশের লোকের সাথে আমার পরিচয় হয় এবং হয়েছে তবে আমি শুধু বাংলাদেশীদের নিয়েই কথা বলবো। আমরা সবাই জানি অনেক আশা বুকে বেধে এই স্বপ্নের দেশে পাড়ি জমান অনেকেই। অনেকে সংসার পরিজনের মায়া ত্যাগ করে এদেশে আসেন আরও ভালো জীবনের আশায়। কেউ কেউ সাফল্য পেয়েও যান আবার আবার অনেকে অনেক কিছু হারিয়ে তার ফামিলিকে সাফল্য পাইয়ে দেন। অনেক সময় আমরা ভাগ্যকেই দায়ী করি। কী জানি হয়তো বা ভাগ্যের হেরফের আছে বৈকি!

আমাদের দেশ থেকে যখন একটি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত /উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবার আসেন বা একাই আসেন তখন অনেক দ্বিধা দ্বন্দ্বের মাঝে দোদুল্যমান থাকেন। প্রথম যেটি ভাষাগত অদক্ষতা।  আবার অনেক দক্ষ লোকও আসেন যারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন অথবা গা ভাসিয়ে দেন। কারণ তারা মনে করেন তাদের শেখার কিছুই নেই। কিন্তু এটা যে কত বড়ো ভুল তারা নিজেই ভাবেন না প্রথমে। অনেক সময় পারিপার্শ্বিক মেলামেশা, নতুন বন্ধুবান্ধবদের পরামর্শও মানুষকে দোটানায় ফেলে দেয়। কারণ কিছু লোক কিন্তু তাদের সীমাবদ্ধতার মাঝেই চিন্তা করে। তবে আমার মতে আপনার সিদ্ধান্ত কিন্তু আপনাকেই নিতে হবে; আপনার ভালোটা আপনাকেই বুঝতে হবে।

সবচেয়ে বড়ো কথা হচ্ছে দেশেই বলুন আর বিদেশেই বলুন নিজেকেই নিজের উন্নয়ন করতে হবে – তাহলে সবখানেই আপনি সমাদৃত হবেন। এই ক্ষেত্রে দক্ষ লোকেরাই কিন্তু বেশি ভুক্তভোগী হন। মানসিক দুর্বলতাও কাজ করে অনেক সময়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় নতুন এসেই চাকরি খুঁজে যে কোনও চাকরি লুফে নেন । এটা হয়তো বা ভয়ে অথবা অনিশ্চয়তায় । এটা কিন্তু খারাপ কিছু নয়। কিন্তু প্রথম কয়েকটি বছর যদি কষ্ট করে নিজের পছন্দের যে কোনও একটি বিষয় নিয়ে একটু পড়াশোনাটা চালিয়ে যান তাহলে একটি মোটামুটি চাকরি পেয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। তবে যারা স্কলারশিপ নিয়ে এসেছেন, স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে এসেছেন তাদের ব্যাপার আলাদা।

মজার ব্যাপার হচ্ছে যারা বাংলাদেশে একটু ভালো অবস্থায় ছিলেন তারা কিন্তু নিজেকে পরিবর্তনের কথা একটু ধীরেসুস্থে চিন্তা করে থাকেন। অপরদিকে যারা একটু নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে আসেন তারা এসেই আপাদমস্তক নিজেকে পরিবর্তন করায় ব্যস্ত হন। আবার অনেকে এসে শুধু তার সহধর্মিণীকে আপগ্রেড করতে পাঠান কারণ উনি ধরেই নেন উনার যোগ্যতা অনেক বেশী কারণ এটা বাঙালি সেন্টিমেন্ট। পরে যখন সহধর্মিণী যোগ্য হয়ে উঠেন উনি তখন হতাশায় ভোগেন , বিভিন্ন টানাপোড়েনের জন্ম নিতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তিনি পাড়ি জমান দেশে সংসার ফেলে! অনেক্ষেত্রেই দেখা গেছে উনি বছরের পর বছর ওই জবটি করে যাচ্ছেন তাতে উনি নিজেই হতাশায় ভুগছেন। এখানে dignity of labor আছে। কিন্তু উনি ভাবছেন অন্য কিছু!

না না শুধু অপারগতার কথা বলছি না! অনেকে আবার আশাতীত সফলতা অর্জন করেন। শুধু তাদের মেধা এবং শ্রম দুটোকে এক করে সফলতা নিয়ে আসেন। কারণ  উনারা পরনির্ভরশীল নন। কেউ কেউ আবার গা ভাসিয়ে দেন এখানে কেউ কিছু বলার নেই এই ভেবে। ফ্রী দেশ! রাত অবধি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মেরে বাসায় ফেরেন, এতে সংসার, বাচ্চা সবার থেকেই দূরে সরে যান। নিজের ক্ষতি কিন্তু নিজেই করেন এবং সময় গড়িয়ে বুঝতে পারেন, তাদের উন্নতি করার চিন্তাটা আসে বয়স পেরুলে!

আর এক পক্ষ আছেন টাকা বাংলাদেশ থেকেই নিয়ে আসেন এবং এখানে জাঁকজমকপূর্ণ জীবন যাপন করেন। স্ত্রী পুত্র রেখে উনারা দেশেই থাকেন । তবে উনারা বড়ো বড়ো আমলা অথবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। তাদের ব্যাপার অবশ্যই আলাদা। তারা অন্য বাংলাদেশীদের থেকে একটু দুরেই থাকেন। তবে অনেকের মাঝেই পরিমিত বোধটুকু আছে তারা কষ্টও করেন, সঞ্চয়ও করেন, বাচ্চা মানুষ করেন। তবে এখানে একটু গাইড করলে ছেলেমেয়েরা এমনিতেই সঠিক পথটা বেছে নেয়। ব্যতিক্রমও আছে! তারা এত বেশি কাজে ব্যস্ত থাকেন যে বাচ্চাদের সময় দেয়া বা কথোপকথনের সময়টুকুও পান না। ফলে অনেক বাচ্চাই বিভিন্ন বাজে কাজে লিপ্ত হয়ে যায়। পরে এর মুল্যটা দিতে হয়।

ইউনিভার্সিটিগুলোতে পড়ার সুযোগ সুবিধা অনেক উন্নত মানের। যারা কানাডার সিটিজেন বা পিআর তাদের গভরমেনট লোন নিয়ে পড়াশুনার সুযোগ রয়েছে। যদিও অত্যন্ত ব্যয়বহুল তবু কাঠামোটি খুবই সংগঠিত। যারা অর্থনৈতিকভাবে পারেন না বা ইউনিভার্সিটিতে মার্কসের জন্য যেতে পারেন না তাদের জন্য আছে কমিউনিটি কলেজ যেখানে ১০০-১৫০টির মতো পার্ট টাইম এবং ফুল টাইম কোর্স আছে। অনেকে চাকরির পাশাপাশি কোর্সগুলো চালিয়ে যেতে পারেন। বাচ্চা নিয়েও অনেকে কোর্স করতে পারেন। সে সুযোগও আছে।

কানাডাতে মোটামোটি ১৫০টি দেশের ইমিগ্র্যান্ট বসবাস করে। তার মধ্যে ইউরোপের দেশগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি। তারা সবচেয়ে আগে এখানে বসতি স্থাপন করেছে। তারা সরাসরি ওয়ার্ক পার্মিট নিয়ে এসে কাজ করতে পারে। ছাত্রছাত্রীরা এসে সামারে কাজ করে আবার দেশে ফিরে যায়। এটা শুধুমাত্র ইউরোপিয়ানদের জন্য প্রযোজ্য।

এখন এই আইন অন্যান্য দেশের জন্যও শিথিল করা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে অনেকে এসে তাদের অভিজ্ঞতা এখন দেখাতে সক্ষম হচ্ছেন যেটা ১৯৯০ এর দশকে সম্ভব ছিল নাI টেকনোলজির যুগে এখন অনেক কিছুই এগিয়ে গেছে।

যারা পড়াশুনা চালিয়ে যেতে চাইছেন তারা ক্রেডিট ট্রান্সফার করে এগিয়ে যেতে পারছেন। যারা সংসারের যাঁতাকলে পড়েছেন তাদের একটু গুছিয়ে নিতে সময় লাগে বৈকি! কিছু আছেন যারা প্রথমেই সাধারণ লেবার জবে ঢুকে যাচ্ছেন তারা একটু পিছিয়ে পড়ছেন কিন্তু তাদের নেক্সট জেনারেশন এর জন্য নিরাপত্তা রেখে যাচ্ছেন নির্দ্বিধায় বলা যায়।

 এতে একটু বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে অবশ্যই। অনেকে শিকার করতে না চাইলেও এটা অনস্বীকার্য। এখানে কাউকেই আমি ছোট দেখাচ্ছি না। শুধু কানাডার জীবনটা তুলে ধরতে চেষ্টা করছি।

অনেকের চোখে সফলতাটা শুধুই টাকার হিসেব মাত্র। ক’টা বাড়ি কিনেছেন, কী গাড়ী চালাচ্ছেন এটাই সফলতা। কিন্তু মানুষটির ভিতরে হয়তো কোনও পরিমিত বোধ নেই, দুটো ইংরেজি ঠিক করে বলতে পারছেন না, অথবা বাংলাটাও ঠিকমতো জানেন না। এটা নিয়ে কিন্তু উনার মাথাব্যাথা নেই! দেশে গিয়ে একজন ইউনিভার্সিটি পড়া মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে আসলেন। মেয়েটির বাবা মা কানাডায় ছেলের বাড়ি গাড়ি, বেশভুসা দেখে বিয়ে দিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেল দুজনের বিস্তর তফাত। দুজন দুই দিগন্তের মানুষ। পরিনাম কী হলো! মেয়েটি কানাডা এসে চোখ খুলে গেছে! কিন্তু ঐ যে আমাদের কালচার মুখ ফুটে কথা বলা মানে বেয়াদব। কিন্তু বউ বেচারা বাইরে চাকরি করছেন, বিভিন্ন লোকের সাথে কথা বলছেন, তাছাড়া উনিতো এগিয়ে ছিলেনই। কিন্তু ঐ বেচারা পাত্রটি কিন্তু ব্যাচেলর অবস্থায় প্রচুর কষ্ট করেন । ১৬/১৭ ঘণ্টা কাজ করে, এক রুমে চার জনের সাথে শেয়ার করে টাকা পয়সা জমিয়েছেন। বাবা মাকে ও টাকা পাঠিয়েছেন! সেটাও খুব দুঃখজনক ।

কানাডাতে সবচেযে সুন্দর ব্যাপার হচ্ছে মালটিকালচারিজম। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে এসে অনায়াসে জীবন যাপন করছেন বিভিন্ন দেশের নাগরিকগন। একটি ২০/৩০ তলা বিল্ডিঙে কত ধরনের জাতি, ধর্ম এবং রঙের মানুষ! কিন্তু তাদের মধ্যে ভাষার আদান প্রদান এবং বন্ধুত্বও হয়। অনেক সময় বিয়ে অবধিও হয়ে থাকে। আজকাল অনেক বৈসম্যের বিয়ে দেখা যায়। তবে ইমিগ্রেশনের ব্যাপারটি নির্ভেজাল হতে হবে।

বাংলাদেশিরা নিজেদের মধ্যে বেশ সুন্দর বন্ধুত্বসুলভ একটি সম্পর্ক বজায় রেখে চলার চেষ্টা করেন। একে অপরকে সাহায্য করেন। দরকার হলে টাকাপয়সা, থাকার জায়গা, চাকরি খুঁজে দেয়া ইত্যাদি। একজনের গাড়ি না থাকলে লিফট দেয়া বা ডাক্তারের কাছে পৌঁছে দেয়া, এমন কি এয়ারপোর্ট নিয়ে যাওয়াও করে থাকেন। সপ্তাহান্তে একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া, আড্ডা দেয়া, সময় কাটানো করে থাকেন যেটা সাউথ এশিয়ানদের মাঝে বেশি দেখা যায়। অন্য কালচারে এটা কম দেখা যায়। তারা ফর্মাল সম্পর্ক বজায় রেখে চলে যাতে মতবিরোধ কম হয় অনেক ক্ষেত্রে সাংসারিক গোপনীয়তাও বজায় থাকে। এজন্য দেখা যায় অনেক বাঙালির মধ্যে বন্ধুত্বটা টেকে না। আবার অনেকের সারাজীবন থেকে যায়। পরিচিতদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিয়েশাদীও হয়। অনেক কালচারাল সংগঠন রয়েছে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে। বছরের ঈদ উদযাপন, পূজা অর্চনা, ক্রিস্টমাস, বৌদ্ধ পূর্ণিমা, ইত্যাদি একসঙ্গে করা হয়। অনেকেই নির্দ্বিধায় একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে উদযাপন করেন। এটি একটি পরম পাওয়া এই দেশে বসে।

দশটি প্রদেশ এবং তিনটি টেরিটোরি নিয়ে কানাডা দেশটি।  অ্যাটলান্টিক থেকে পেসিফিক মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত এই দেশ। পৃথিবীর দ্বিতীয় বড় দেশ এটি এবং সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্রসীমা। কিন্তু জনসংখ্যা পৃথিবীর জনসংখ্যার ১% এর নিচে। অটোয়া কানাডার রাজধানী যেটা অন্টারিও প্রভিন্সে। কানাডা এর দুটি ভাষা, ফ্রেঞ্চ এবং ইংলিশ। কানাডার সিম্বল ম্যাপল পাতা। প্রধান খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে ম্যাপেল সিরাপ, সালমান মাছ, পুঁটিন, অ্যাপেল পাই ইত্যাদি । টরন্টো সিটিতে কানাডার সবচেয়ে বেশী ইমিগ্রান্টদের বসবাস। প্রাকৃতিক সম্পদ মিনেরালসের মধ্যে আছে গোল্ড, কয়লা, আয়রন, কপার, পটাশ। আছে প্রাকৃতিক গাস ও লামবার এবং ইউরেনিয়াম (রেডিও অ্যাক্টিভ এলিমেন্ট)। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া এবং কুইবেক প্রভিন্সে সবচেয়ে বেশি লাম্বার হয়। Birch, Maple, Oak, Aspen, Poplar ইত্যাদি । ৯২% Maple Syrup আসে কুইবেক প্রভিন্স থেকে । আমেরিকা হচ্ছে প্রাথমিক ক্রেতা।  আর একটি শক্তিশালী সম্পদ হচ্ছে Hydro। Hydro-Quebec কানাডার প্রধান ইলেক্ট্রিসিটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।

পৃথিবীর মানুষের কাছে একটি আকর্ষণের জায়গা হচ্ছে নায়েগ্রা ফলস। সপ্তম আশ্চর্যের একটি । এর কথা তো উল্লেখ না করলেই নয়। বিভিন্ন দেশের পর্যটক এসে ভীড় জমান এই নায়েগ্রা ফলসে। অসংখ্য নদী, পাহাড়, প্রেইরি, হাজার বছরের পুরাতন শিলা নিয়ে অপরূপ সুন্দর এই দেশটি।

শীত,  গ্রীষ্ম, শরৎ আর বসন্ত এই চারটি ঋতু পরিবর্তন বেশী লক্ষনীয়। পাঁচ মাস শীতকালের স্থায়িত্ব – নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত। জুন মাস থেকে অগাস্ট পর্যন্ত সামার থাকে। তাপমাত্রা বেশ ভালো থাকে। সামারে অত্যন্ত সুন্দরভাবে পালিত হয় বিভিন্ন খাবারের উৎসব, পরিধেয় বস্ত্র , বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফোক ফেস্টিভ্যাল ইত্যাদি। তাছাড়া ফার্মে গিয়ে Cherry picking, Strawberry picking, Apple picking ইত্যাদি খুব জনপ্রিয় সামারে। আরও রয়েছে Lavender Farm , Sunflower Farm এ যাওয়া। ফ্যামিলি অথবা বন্ধুরা মিলে একসাথে কটেযে যাওয়া, বোটে করে ঘুরে বেড়ানো, দূরে কোথাও ড্রাইভ করতে যাওয়া ইত্যাদি।

কানাডায় প্রতিটি এরিয়াতে ছোটো বড়ো পার্ক আছে যেখানে ছুটির দিনগুলোতে ডে পিকনিক করা হয়। মোট কথা সামার ভালই কাটে সবার । অক্টোবর মাসে Halloween এর জন্য pumpkin Festival এবং আরলি স্প্রিঙে Tulip Festival।

চিকিৎসাক্ষেত্রটি বেশ উন্নত। ফ্যামিলি ডাক্তারের আওতায় মোটামুটি সবাই আছেন। স্পেশিয়ালিস্টের দরকার হলে তারাই রেফার করেন। হাসপাতালের ব্যবস্থাও ফামিলি ডাক্তার করেন। তবে বৈষম্য আছে। যার যত ভাল ইনসিওরেন্স কভার আছে তার তত ভালো চিকিৎসা ও ভালো সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে। বিভিন্ন রিসার্চের হাসপাতাল, শিশু হাসপাতালসহ অনেক বড় বড় স্পেশিয়ালাইজ হাসপাতাল প্রত্যেকটি প্রভিন্সে আছে।

পরিশেষে অনেকেই ভালো করছেন, নতুন প্রজন্ম অনেক এগিয়ে আছে এটাই আমাদের পরম পাওয়া। চাকরির ক্ষেত্রে অনেকেই ভালো করছেন। ভালো পজিশনে, অনেক বাংলাদেশিকেই অনেক উচ্চপদে দেখা যাচ্ছে। তবে আমেরিকার তুলনায় কম। এটা হয়ত এখানকার সমাজ ব্যবস্থার জন্য কিছুটা দায়ী। অনেকেই বিজনেসের দিকে এগিয়ে গেছেন এবং ভাল করছেন। তবে চায়নিজ, ইন্ডিয়ানরা অনেক এগিয়ে এ ক্ষেত্রে। কারণ তারা ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এসব দেশে এসেছেন। এখন তাদের তিন পুরুষ চলছে এসব দেশে। ইউরোপিয়ানদের আরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। মানসিক প্রশান্তি আছে এই দেশটিতে। নিজের ইচ্ছেমত থাকার অধিকার আছে।

তবু এতো কিছুর পরও মনটি পরে থাকে নিজের দেশের অলি গলি আর রাজপথের আনাচে কানাচে। পরে থাকে বাল্যস্মৃতির মাঝে । ধানখেতের মৌ মৌ গন্ধ, মাটির সুধা আর দুরন্ত কিশোরের ছুটে চলার মাঝে। পরে থাকে মেঠো সুর আর পাল তোলা নৌকার ছলাত ছলাত শব্দের মাঝে।