এলিনা মিতার কবিতা হিরন্ময় মনের কাব্য

সামিনা চৌধুরী

আধুনিক এই জটিল সময়ে জীবনের অজস্র টানাপোড়েন, নিঃসঙ্গতা, বেদনা, হতাশা, দ্রুত শিল্পায়নে বদলে যাওয়া মানুষের বিপ্রতীপ মুখাবয়ব আর পুঁজিবাদী সমাজের পীড়নে ক্লিষ্ট জীবনে করোটিতে ভাবনার ইন্দ্রজাল বিছিয়ে কবিতা রচনা করা যায়। সেই কবিতায় থাকে দ্রোহ আর বহমান এই জীবন থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। হিরন্ময় পাখি মন’ গ্রন্থে কবি এলিনা মিতা আশা-নিরাশা, একাকিত্ব, হতাশা, মুক্তির প্রত্যাশা আর নস্টালজিয়ার ছবি এঁকেছেন। ইংরেজ কবি টি এস এলিয়ট বলেছেন, ‘কবিতা আবেগের প্রকাশ নয়, বরং আবেগ থেকে বের হয়ে আসা; এটি ব্যক্তিত্বের প্রকাশ নয়, ব্যক্তিত্বকে সর্বজনীন করে তোলা।‘ অর্থাৎ কবিতায় আবেগ থাকলেও কবিতায় প্রকাশিত বার্তা স্থান-কালের উর্ধে উঠে জীবনের এক চরম বাস্তবতা প্রকাশ করে। একইভাবে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন,  ‘কবিতার সারকথা নাকি সত্য, অথচ কবিরা সব মিথ্যুকের একশেষ নয়?’  তাই আবেগ আর কল্পনায় বিচরণ করেও কোনো কোনো কবি এক পংক্তিতেই অমরত্ব পেয়ে যান। এলিনার কবিতায় ছন্দ আর শব্দের ঝংকারে ফুটে উঠেছে জীবনের ধ্রুব সত্যের এক কাব্যময় প্রকাশ।      

‘আধুনিকতা’ শব্দটি সময়ের বিচারে আপেক্ষিক। আধুনিকতার ক্ষেত্রে পরম বা চরম বলতে কিছু নেই। বাংলা কবিতার ক্ষেত্রে উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, রবীন্দ্রনাথ তাঁর সময়ের বিচারে আধুনিক। আবার বুদ্ধদেব বসু বা সমকালীন একাধিক কবিকেও বলা হয় আধুনিক। ভিক্টোরিয়ান যুগ থেকে বের হয়ে আসার পর কবিতার বৈশিষ্ট্যের অনেক পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু তবু ‘আধুনিকতা’ শব্দটি চিরসবুজ। ‘উত্তর আধুনিকতা’ তত্ত্ব এলেও কবি ও পাঠক সমকালীন সময়ের কবিতা বোঝাতে ‘আধুনিক কবিতা’ বলতেই ভালোবাসেন বেশি। আমরা তাই আধুনিক কবিতা শব্দটিকে ব্যবহার করে থাকি। টি এস ইলিয়টকে বলা হয় আধুনিক কবিতার জনক। প্রথম মহাযুদ্ধের পর ১৯২২ সালে প্রকাশিত তাঁর ‘দ্যা ওয়েস্ট ল্যাণ্ড’ কাব্যগ্রন্থে তিনি যুদ্ধ বিধ্ধস্ত ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে আধুনিক জীবন যন্ত্রণার হতাশা ব্যক্ত করেছেন। অনেকে মাইকেল মধুসূদন দত্তকে বাংলা সাহিত্যের আধুনিক কবিতার জনক মনে করে থাকেন। সনেট রচনার মাধ্যমে তিনি চৌদ্দ মাত্রার পয়ারে আট-ছয়ের চাল ভেঙে দেন এবং আঠারো মাত্রার মহাপয়ার রচনার মাধ্যমে বাংলা কবিতার নতুন ছন্দরীতির প্রচলন করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বঙ্গীয় সমাজের বিদগ্ধ মধ্যবিত্তের মনন ও চৈতন্যের অদ্ভুত পরিবর্তনের কবিতা লিখার কারণে অনেকে বিষ্ণু দে বা জীবনানন্দকেও আধুনিক কবিতার পুরোধা মনে করেন। আধুনিক কবিতার এই তাত্বিক আলোচনাকে পাশে রেখে একথা বলাই যায় যে আধুনিক কবিতা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানান বিষয়কে ছন্দ, উপমা ও শব্দবিন্যাসে সৃজনশীলতার মধ্যে দিয়ে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে উপস্থাপন করে পাঠকের হৃদয়ে স্থান করে নেয়।

কবি মাত্রই আবেগী; কবি মাত্রই ভালবাসা খুঁজে ফেরা মানুষ। আর সে কারণেই প্রেমের কবিতা সব কবিই লিখে থাকেন। ‘হিরন্ময় পাখি মন’ গ্রন্থে প্রেমের কবিতা আছে; পাশাপাশি আছে বিরহের আখ্যান। ‘পথে হলো দেরি’ কবিতায় পাঠক পাবেন রবীন্দ্রনাথের রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা সেই নারীকে, যিনি পাঠককে অবাক করে কথা বলে উঠেছে; মুখে প্রসন্নতার হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে; সবাই নেমে যাবার পর কাছে এসে বসেছে; চাপা কন্ঠে জিজ্ঞাসা করছে ‘আমাদের গেছে যে দিন, একেবারেই কি গেছে?’ ‘বাউলের একতারা’ কবিতায় পাঠক অনুভব করবেন প্রেম হারানোর বেদনা। ‘তয় কি নতুন গান বান্দছো? করে নিয়া বান্দলা গো বাউল?’ – এ যেন ভালবাসা হারানোর সেই চিরন্তন ‘হারাই হারাই’ ভয়। এলিনা খুব নাটকীয়তার সাথে ভালবাসার কবিতাগুলো উপস্থাপন করেছেন। বইটিতে ‘অনুরাগের ছোয়া’, ‘ময়না পাখি’ ‘নারী ও প্রেম’ ‘উড় চিঠি’সহ আরও বেশ কয়েকটি চমৎকার প্রেমের কবিতা আছে। ভালোবাসা তীব্র হলেই হয়তো হারানোর ভয় বেশি থাকে। বইটির প্রথম কবিতাটির নাম ‘একাকিত্বের গুঞ্জন’ যেখানে কবি লিখেছেন, ‘সেই কবে চলে গেছো, কত বসন্ত, কত শ্রাবণ/ নিভৃতে কেঁদেছে।/কতদিন তোমার কথা মনেও পড়েনি।’ ‘কেন যায় না ভোলা’ কবিতায়  লিখেছেন, ‘খুব যত্ন করে ভুলতে চেয়েও বড্ড বেশি করে মনে পড়ে তোমাকে।’ এরকম আরো কিছু কবিতা যেমন ‘তুমি ও আমি’ ‘ভাঙনের গীত’ ক্লান্ত কলরব’সহ আরো কবিতার  নাম বলা যায় যেখানে পাঠক সবার মাঝে থেকেও এক বিরহী কবি এলিনাকে পাবেন।

টি এস এলিয়ট ‘দ্যা ওয়েস্ট ল্যাণ্ড’ কাব্যগ্রন্থে অর্থহীন সভ্যতার কথা আর মৃত্যুর কথা লিখতে গিয়ে ‘হোয়াট দ্যা থান্ডার সেড’ কবিতায় লিখেছেন, ‘একসময় যারা বেঁচে ছিল, তারা আজ মৃত/ আমরা যারা এখন বেঁচে আছি, তারাও খুব ধীরে মৃত্যুর দিকে যাচ্ছি।’ বর্তমান আধুনিক মানুষের কাছে মহাবিশ্বের অনেক রহস্য স্পষ্ট হলেও মৃত্যু এখনো রহস্যময়, যা হয়তোবা বিজ্ঞানীদেরও হতাশ করে। কবি এলিনার ‘মৃত্যুভয়’ কবিতায় সেই হতাশাটা পাঠক অনুভব করবেন। কবির ভাষায়, ‘মাথার কাছে বালিশের বদলে  থাকে মৃত্যু ভয়!’ পুঁজিবাদের অস্থিরতা আর মূল্যবোধের পরিবর্তনের কারণে মানুষ এখন একা হয়ে গেছে। আধুনিক মানুষ দলে থেকেও আলাদা থাকে। তাই আধুনিক কবিতার একটি বৈশিষ্ট নিঃসঙ্গতা। ‘হিরন্ময় পাখি মন’ গ্রন্থে বেশ কয়েকটি নিঃসঙ্গতার কবিতা আছে। ‘দূর থেকে ভাল লাগে মানুষ’ কবিতায় এলিনা লিখেছেন, ‘মানুষের কাছে গেলে হয় মৃত্যু।/ মৃত্যু বিশ্বাসের, মৃত্যু স্বপ্নের;’  কিছু কবিতা যেমন ‘ক্ষীণ আশা’, নদীটা শুকিয়ে গেছে’ প্রভৃতি কবিতায় অর্থহীন জীবনের হতাশা আর নিঃসঙ্গতা উঠে এসেছে।

কাজী নজরুল ইসলাম ব্রিটিশ রাজ্যের হুমকি হয়েছিলেন ‘বিদ্রোহী’ কবিতা লিখে। বঞ্চিত, অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পক্ষে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে কবিতা সবসময় গর্জে উঠেছে। বর্তমান সময়ে আমাদের দৈনন্দিন রোজনামচায় অস্থিরতা, অবক্ষয়, শ্রেণী বিভেদ, সহমর্মিতার অভাব প্রভৃতি বিষয় ক্রমশই দীর্ঘতর হচ্ছে। কবিদের হাতিয়ার তাদের কবিতা; কবিতায় কবি দাবি করেন সমাজ বদলের; তাই কবিতায় উঠে আসে দ্রোহ। সুনীল তাঁর কবিতায় বলেছিলেন, ‘চেয়েছি নতুন দিন, গ্লানিহীন, যৌবরাজ্য সৃষ্টিতে স্বাধীন।/ চাইনি এমন ঘোর কালবেলা অসহিষ্ণু ঘৃণা।’ কবি এলিনা তার ‘হেমিলনের বাঁশী’ কবিতায় বলেছেন, ‘সেই বাঁশী, সেই সুর, সেই হেমিলন -কে /খুঁজি আমি।/দূর করে দেবে যে সব অনাচার, অত্যাচার …।’  সুকান্ত ভট্টাচার্য শীতের হিমশীতল রাতে রাস্তার ধারের উলঙ্গ ছেলের জন্য সূর্যের উষ্ণতা চেয়ে লিখেছিলেন, ‘হে সূর্য! শীতের সূর্য! হিমশীতল সুদীর্ঘ রাত তোমার প্রতীক্ষায়/ আমরা থাকি’; আর এলিনা তার ‘এক চিলতে রোদ’ কবিতায় লিখেছেন, ‘রাতের অন্ধকার কখন কাটবে?/ কখন হবে ভোর; অধীর অপেক্ষা!/ এক চিলতে রোদ্দুর করতে পারে দূর/ অসহ্য এই শীতের যন্ত্রনা।’ এলিনা ‘অঙ্গীকার নিজের কাছে’ কবিতায় অঙ্গীকার করে বলছেন, ‘আগামী প্রজন্মের কাছে/এক নতুন পৃথিবী রেখে যাবো/ এ অঙ্গীকার নিজের কাছে।’ কবি আরও অঙ্গীকার করে বলেছেন এমন সমাজের জন্য তিনি কাজ করতে চান যেখানে সমাজ হবে দুর্নীতি মুক্ত, নিরাপদ সকল কন্যা শিশু, নেই মোল্লা পুরোহিতের অধর্ম। এই কবিতাটি পড়তে গিয়ে পাঠক হয়তোবা সুকান্তের কথা শুনতে পাবেন, ‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি/ নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’ ‘হিরন্ময় পাখি মন’ গ্রন্থের কবিতাগুলো পড়তে পড়তে পাঠকের মনে হবে কবিরা সবাই বুঝি একজোট হয়ে সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন আঁকছেন। এলিনাও সবার সাথে একজোট হয়ে অপেক্ষা করেন সোনালী দিনের যখন বৈষম্যহীন দিনের আলোয় হাসবে মানুষ।

হিরন্ময় পাখি গ্রন্থের ভূমিকায় কবি লিখেছেন, ‘এই গ্রন্থে নিজের মুক্তির কথা, ভাবনার কথা, আবেগের কথা, কষ্টের কথা, ভালবাসার কথা লিখেছি।’ বইটা পড়তে পড়তে পাঠকও একমত হবেন কবির সাথে। একজন সমাজ সচেতন নারী হওয়ার কারণে কবি এলিনা মিতা বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত বিষয় নারী স্বাধীনতা, নারী ক্ষমতায়ন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রভৃতি বিষয়ে লিখেছেন তাঁর গ্রন্থে। তার লেখা ‘মিনির খেলনার বাক্স’ কবিতায় পাঠক দেখবেন ছোট্ট মেয়ে মিনি পুতুল খেলতে খেলতে সংসারে পা দিয়ে কেমন করে নিজের পুরো পৃথিবী হারিয়ে ফেলে, সংসারের যন্ত্রে কেমন করে পিষ্ট হয় তার স্বপ্ন। কবির ভাষায়, ‘খেলনার বাক্সই সব ছিল, ছিল মিনির বিশ্ব,/ সব থেকেও মিনি যেন  একেবারেই নিঃস্ব।’ কবিতাটি যেন সমাজের হাজারো মেয়ের সংসারে বলি হয়ে যাবার আখ্যান। ‘শরতের এক সকাল’ কবিতায় পাঠক দেখবেন এক ধর্ষিতা ফুল বিক্রেতা কিশোরীর লাশ হয়ে যাবার বয়ান; নিরাপত্তাহীন সমাজের নোংরা পুরুষের আদিম লালসার বলি হয়ে যাওয়া খেঁটে খাওয়া বিপন্ন নারী পিয়ারীর সংগ্রামের গল্প। ‘সভ্যতায় শঙ্কা’ কবিতায় কবি লিখেছেন নারী আরো কতভাবে নির্যাতিত হয়। কবিতাটিতে পাঠক পড়বেন যৌন হয়রানির ভয়ে কিশোরী মেয়ের  শিক্ষক ভীতির আর্তনাদ। কবির ভাষায়, ‘শরীরখানাই শত্রু আমার, চাইনা হতে বিদ্বান।’ আমেরিকান সাহিত্য সমালোচক এলেন মায়ের্স তার ‘লিটারারি উইম্যান’ গ্রন্থে  বলেছেন নারী লেখকের লেখায় গার্হস্থ্য জীবনাকাঙ্ক্ষা, পুরুষশাসিত সমাজে নারীদের ভয়ভীতি ও প্রতিবন্ধকতার চিত্র ফুটে উঠে। সেভাবে দেখলে এলিনার কবিতায় নারীর কথা উঠে এসেছে যেকোনো পুরুষ কবির চেয়ে বেশি। একজন সমাজের সচেতন মানুষ হিসেবে নারী লেখকের লেখায় নারীর সংগ্রাম উঠে আসাটাই প্রয়োজন। এলিনা তাঁর সেই সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছেন অসাধারণ পেশাদারিত্বের মাধ্যমে। 

সব যুগেই দেশপ্রেমের কবিতা লেখা হয়েছে। মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ, জীবননান্দ প্রমূখ কবিরা অসংখ্য কবিতা লিখেছেন দেশপ্রেম নিয়ে। মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশপ্রেমের গান-কবিতা প্রেরণা দিয়েছিল মুক্তিকামী মানুষকে। পল্লীকবি খ্যাত জসীমউদদীনের কবিতায় গাঁথা হয়েছে পল্লীর অপরূপ মায়াভরা শোভা আর সহজ ভালবাসার কাব্য। শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, নির্মলেন্দু গুণ প্রমুখের কবিতাতেও দেশ খুব উজ্জ্বল একটা বিষয়। এলিনা ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় লিখেছেন, ‘আমাদের গ্রামখানি ভাসে সবুজ ভেলায়/ খয়েরী রং এর সরু পথ কুটির খুঁজে নেয়।/ … মন করে উতল‘ পড়তে পড়তে পাঠক উদাসী বায়, লতায় পাতায় জড়ানো ছোট গাঁয়ে ঘুরে আসবেন। এলিনা পরম শ্রদ্ধায় লিখেছেন ‘জীবনের শ্রেষ্ঠ কবিতা শুনেছিলাম / সেই ছোট্ট বেলায়, আমার বাবার মুখে।/  আগুন ঝরা মার্চের কবিতা।’  তার ‘বাবার চোখে বাংলাদেশ’ কবিতায়; পড়তে গিয়ে পাঠকের মনে হবে এলিনাকে তার বাবা যেন শুনিয়েছিলেন নির্মলেন্দু গুণের সেই অমর পংক্তিমালা … ‘একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা … কখন আসবে কবি?’ ২০২২ এ প্রকাশিত এলিনার ‘নৈঃশব্দ্যের নিঃসঙ্গতা’ গ্রন্থের কবিতা ‘মহানায়কের মহাকাব্য’ কবিতাটিও তিনি শেখ মুজিবর রহমানকে শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখেছেন। কবি এলিনার দেশপ্রেম মূর্ত হয়ে উঠেছে ‘কীর্তনখোলা নদী ও আমি’ কবিতায়, যেখানে কবি কীর্তনখোলা নদীকে স্মরণ করেছেন পরম মমতায়; ‘কপোতাক্ষ নদের বোবা কান্না’ কবিতায় এলিনা ভূমিদস্যুদের কবলে দেশের দুর্দশায় কেঁদে উঠেছেন। এভাবেই মনের মাধুরী আর অসামান্য মমতা দিয়ে এলিনা তার দেশকে এঁকেছেন অপূর্ব ছন্দে।  

‘হিরন্ময় পাখি মন’ গ্রন্থের কবিতার বিষয়বৈচিত্র এবং কবিতার শব্দবিন্যাসের মুন্সিয়ানা উল্লেখ করার মত। পদ্য, ছড়া, লিমেরিক, অক্ষরবৃত্তের কবিতা এবং বিষয়বৈচিত্র থাকার কারণে বইটি সুখপাঠ্য। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে ইচ্ছে স্বপ্ন প্রকাশনী, প্রকাশকাল এপ্রিল ২০২৩। প্রচ্ছদ এঁকেছেন চারু পিন্টু। প্রচ্ছদে গ্রাম বাংলা এবং রূপকথার কিছু মোটিফ এঁকেছেন শিল্পী। কবির হিরণ্ময় মনের কাব্যময় প্রকাশ বোঝাতে প্রচ্ছদটি অর্থবহ। বাচিকশিল্পী এবং সংস্কৃতিকর্মী এলিনা মিতা ইডেন কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স পাশ করে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ করেছেন। তিনি টরন্টো শহরে বাস করেন। ‘হিরন্ময় পাখি মন’সহ তার মোট তিনটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ থিয়েটার, উদীচি, কণ্ঠচিত্রণসহ বেশ কিছু সংগঠনের সাথে যুক্ত আছেন। বইটির ভূমিকায় কবি দেলোয়ার এলাহী লিখেছেন , ‘নানা অনুষঙ্গে নানান ভাবনার ছবি এঁকেছেন এলিনা মিতা তার এই কাব্যগ্রন্থে। … কবিতার জন্যই যেন তার ব্যাকুল প্রতীক্ষা।’  এলিনাও ‘’কবিতার জন্য-ই শুধু’  কবিতায় লিখেছেন, ‘ কবিতার জন্যই আজকাল বিচরণ/ সকল সাহিত্য সভায়।’  কবিতার জন্য এলিনার এই ভালোবাসা, সাধনা আর আরাধনাকে পাঠক অনুভব করবেন ‘হিরণ্ময় পাখি মন’ গ্রন্থের কবিতাগুলোতে। কবি এলিনা  মিতাকে অভিনন্দন চমৎকার এই প্রকাশনাটির জন্য।  

……………………….

সামিনা চৌধুরী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর অধ্যাপনা পেশায় যুক্ত হন। সরকারি কলেজে অধ্যাপনাকালে বাংলাদেশ ইউনেস্কো কমিশনেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫ সালে যুক্ত হন ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশে-বিদেশে সামিনার মোট নয়টি পিয়ার রিভিউ প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে কানাডায় অভিবাসী সামিনা পাঁচ বছর ধরে টিডি ব্যাংকে কাস্টমার কেয়ার বিভাগে কাজ করছেন।