অতনু দাশ গুপ্তের কানাডার পথ ও রথের বৃত্তান্ত

ড. ঝর্ণা চ্যাটার্জী

অনেক আগ্রহ নিয়ে অতনু দাশ গুপ্তের লেখা ও আমাকে ভালবেসে উপহার দেওয়া ‘কানাডার পথ ও রথ’ বইটি পড়ে শেষ করলাম। কানাডাতে নবাগত যারা, যারা প্রথম থেকেই কাজের অফার নিয়ে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিচিং অথবা রিসার্চ এ্যাসিস্ট্যান্টশিপের রক্ষাকবচ নিয়ে আসেননি, তাদের জন্য এই বইটি অবশ্য-পাঠ্য বলে মনে হলো।

একটি অল্পবয়সী ছেলে একেবারে ‘জলের মাছ ডাঙ্গায়’ এই দুরবস্থায় পড়ে কী করে সাঁতার কাটতে পারা থেকে স্থলে উঠে দাঁড়াতে, নিজের পায়ে হাঁটাচলা করতে, এমন-কি গাড়ি চালাতে আর নিজের জীবিকা উপার্জন করতে শিখল, তার করুণ-মধুর কাহিনি লিখেছেন অতনু। সহানুভূতি অনুভব না করে পারা যায় না। এরই মধ্যে কেটির মত ‘বস’ আর জুয়েল বা সুমনের মত বন্ধুর অবদান কখনও তার জীবনযুদ্ধকে যথাক্রমে আরও কঠিন আবার কখনও সহজতর করেছে সে গল্পও শুনতে ভাল লাগবে। কানাডার তীব্র শীত ও তার অপরিহার্য নিত্যসহচর তুষার ঝড় – তার মধ্যে অজানা পথে, ম্যাপ দেখতে না পারা, এক্সিট মিস করা – সেগুলো পড়তে পড়তে প্রায় ‘সাসপেন্সের’ বই পড়ার মত অবস্থা পাঠক-পাঠিকার।

পারবে তো ও নিরাপদে কোন দুর্ঘটনা না ঘটিয়ে গন্তব্যে পোঁছাতে? অবশেষে বসন্তের আরাম যে কতটা আদরের আর গ্রীষ্মের কিছুদিন একটু আশা-ভরসার আলোয় যেন নতুন জীবন পাওয়া – এধরনের অভিজ্ঞতা কানাডায় এলে তবেই সম্পূর্ণ উপলব্ধি করা যায়। কানাডায় গাড়ি চালাতে শেখা, লাইসেন্স পাবার আগেই সহযাত্রীদের নিয়ে রোমহর্ষকভাবে ড্রাইভিং করা, পথ হারিয়ে শেষ পর্যন্ত আবার নিরাপদে ঘরে ফেরা – এমন কান্ড ক’জনের ভাগ্যে হয়? আর তা লেখেই বা ক’জনে? চাকরি পাওয়ার গল্পও তথৈবচ। কী না করেছে এই ধৈর্যশীল যুবকটি – অন্ন-সংস্থানের, একটু নিরাপত্তার আর আশ্রয়ের জন্য! ভাগ্য কখনও প্রসন্ন হয়েছে, কখনও হয়নি। কিন্তু হাল ছাড়েনি সে। সত্যি প্রশংসনীয়। এই নানা পরিস্থিতির মধ্যে অতনু অনেক, অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে, আর তা লিপিবদ্ধ করেছে এই বইটিতে।

এর পাশাপাশি বাংলাদেশে গাড়ি চালাতে শেখার চেষ্টা আর এক নতুন মাত্রা এনেছে অতনুর বিবরণীতে। গাড়ি চালাবার স্কুলের ‘গুরুজী’ কেন যে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ শিক্ষার্থীর প্রতি আরও একটু সহানুভুতিশীল ছিলেন না, তা বুঝতে পারি না। দলের অন্যদের ওর মতো অবস্থা কারো ছিল না। কেউ ছোটবেলা থেকে গাড়ির সাথে পরিচিত, কেউ বা গাড়ি চালাতেও জানে, শুধু লাইসেন্স পাওয়া সহজ হবে বলে এসেছে ড্রাইভিং স্কুলে। তাদের তুলনায় আমাদের অতনু একেবারে আনকোরা নতুন, জানে না তার জন্যই এসেছে শিখতে। সেটা তো অস্বাভাবিক নয়। সেটাই যুক্তিসম্মত। তবে?

অতনু লিখেছে পরবর্তী প্রজন্মের কথা ভেবে ও এই বইটি লিখেছে। আমার মনে হয় ওর এই প্রচেষ্টা সফল হয়েছে, হবে। নিজের তোলা কিছু ছবি যোগ করে নিজের অভিজ্ঞতাকে আরও সজীব করে তুলেছে অতনু। ওকে আমার অজস্র ধন্যবাদ এই বইটি লেখার এবং আমাকে উপহার দেবার জন্য।